খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে

মো: তৌহিদুর রহমান তাহসিন,খুলনা প্রতিনিধি:
খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডাঃ প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস এ প্রতিবেদককে বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের সর্বক্ষণিক মনিটরিং করার জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালে ১০ শয্যার একটি ডেঙ্গু বিভাগ চালু করা হয়েছে। ভর্তিকৃত রোগীদেরকে এনএসওয়ান-এজি টেস্টটি ফ্রি করানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত ২৯ জন আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।
খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সহকারী পরিচালক ডাঃ ফেরদৌসী আক্তার রোববার এ প্রতিবেদককে বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আক্রান্ত অধিকাংশই ঢাকায় থাকাকালীন এই রোগে আক্রান্ত হন। সময়মতো চিকিৎসা সেবা প্রদান করলে এই রোগ থেকে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। চলতি মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত অর্থাৎ গত ২৫ দিনে খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৯ জন। যার মধ্যে যশোরে রয়েছে ৪৪ জন। এর মধ্যে একজন মারা গেছে। এছাড়া খুলনায় বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মিলে ৫০ জন ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছে খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, নড়াইল ও চুয়াডাঙ্গা।
এদিকে খুলনা সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১১৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে লিফলেট বিতরণ ও জনসচেতনতামূলক সভা করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, জুলাই থেকে অক্টোবর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকে। সেই অনুযায়ী সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরও বৃদ্ধি পাবে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক এডিস মশা হওয়ায় বিষয়টি মশক নিধনকারী কর্তৃপক্ষসহ বিশেষজ্ঞদের বেশি মাত্রায় ভাবিয়ে তুলেছে। তবে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় চিন্তামুক্ত থাকতে পারছে না নগরবাসী।
খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খুলনায় ৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। তারা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। উপজেলায় কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর খবর পাওয়া যায়নি। ফুলতলায় একজন ভর্তি ছিলো সে চিকিৎসা সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য জেলায় ১১৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রত্যেক উপজেলায় ৫টি টিম ও প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম রয়েছে। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলোচনা সভা, লিফলেট বিতরণ ও র্যালি করা হয়েছে।
জাসদ খুলনা মহানগর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, খুলনাসহ সারা দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা যে হারে বেড়ে চলেছে তা প্রতিরোধে নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে মশক নিধন বা মশা মারার ওষুধ দিতে দেখা যায় না। এখনও পর্যন্ত কেসিসির কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। এর পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মান ভালো না। বর্ষা মৌসুমে খাল নিষ্কাশন না করে ড্রেনের কাজে হাত দেওয়ায় জলাবদ্ধতা বেড়ে গেছে। ফলে কেসিসিকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। মশক নিধনের ওষুধ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আজ থেকেই মাসব্যাপী সমস্ত ওয়ার্ডে একযোগে করতে হবে। তিনি এ বিষয়ে নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কনজারভেন্সি অফিসার আনিসুর রহমান রোববার এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে বেশি করে পর্যায়ক্রমে ফগার মেশিন, লার্ভি ও কালোতেল স্প্রে করা হচ্ছে। মশক নিধন কার্যক্রম বিষয় নিয়ে জরুরি মিটিং করা হচ্ছে। মশক নিধন কার্যক্রমে ৩৯ জন কর্মী মাঠে রয়েছে। এছাড়া মাইকিং করা হচ্ছে।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সূত্র মতে, ৩ জুলাই থেকে খুলনা বিভাগের ডেঙ্গু আক্রান্তদের মনিটরিংয়ের কাজ শুরু হয়। ২৮ জুলাই পর্যন্ত ২৫ দিনে খুলনা বিভাগের ১৩৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে যশোরে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক ব্যক্তি মারা গেছে।
