গোলাপগঞ্জে সুরমা-কুশিয়ারার ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে শত শত বাড়ী

মো: রুবেল আহমদ, গোলাপগঞ্জ থেকে:
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সুরমা কুশিয়ার ভাঙ্গনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শত শত বসত বাড়ী। বর্ষার শুরুতে এ নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পায়। নদী ভাঙ্গন রোধে সরকারি কোন উদ্যোগ না থাকায় প্রতি বছরই ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদী পাড়ের অগনিত লোক গৃহহীন হয়ে যাযাবরের মত জীবন যাপন করছেন। বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে গৃহহারা মানুষের আহাজারি। সরকারি ভাবে বড় ধরনের কোন উদ্যোগ নেয়া না হলে আগামীতে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনের সংখ্যা কেবল বৃদ্ধিই পাবে বলে নদী পাড়ের লোকজনের অভিমত।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার উল্লেখযোগ্য অংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী। নদী দুটির পাড়ে গোলাপগঞ্জের শতাধিক গ্রামের অবস্থান। সব স্থানে ভাঙ্গন না থাকলেও নদীর গভীর স্থান গুলোতে ভাঙ্গনের ভয়াবহতা দীর্ঘ দিনের। সুরমা নদীর তীরবর্তী বাঘা ইউনিয়নের মজিদপুর, পূর্ব খালপাড়, রুস্তমপুর, খালপাড়, জালালনগর গ্রামের শতাধিক পরিবার বিগত দুই বছরে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। তাদের অনেকেই গৃহ হারা হয়ে পাশ^বর্তী অন্যের বাড়ী অথবা আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছেন।
জালালনগর পূর্ব খালপাড়ে সরেজমিনে গেলে দেখা যায় গরীব, অসহায় লোকজনের করুণ আর্তনাদ। বিগত এক যুগে তাদের এলাকার অধিকাংশ বসতবাড়ী নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এলাকার বাসিন্দা মাওলানা ফয়জুল বারী এব্যাপারে প্রতিবেদকে জানান তাদের এলাকার বেশিরভাগ লোক গরীব ও অসহায়। দারিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করে ঐ এলাকার মানুষ কোন রকমে বেঁচে আছে। নদী ভাঙ্গন তাদের জন্য সবচেয়ে বড় অভিশাপ। ঐ এলকার জনগনকে রক্ষা করতে সরকরি ভাবে জরুরী ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তিনি দাবী জানিয়েছেন। তাদের পাশর্^বর্তী মজিদপুর, জালালনগর, রুস্তমপুর গ্রামের মসজিদ, মাদ্রাসাসহ অনেক পুরনো স্থাপনা আজ হুমকির মুখে। বিগত এক যুগে ঐ এলাকার কয়েকশত পরিবার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে এলাকার তরুণ সমাজসেবী ছাদেক আহমদ খান জানালেন। অনুরূপভাবে সুরমার ভয়াবহ ভাঙ্গনে আজ দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি এমসি একাডেমী স্কুল ও কলেজ খুবই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পাশ^বর্তী পশ্চিম-উত্তর ও পূর্ব-উত্তর দিকের বেশ কটি বাড়ী সুরমা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। এর উজানে উপমহাদেশের প্রাচীনতম ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাঘা গোলাপনগর আরবিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা, রানাপিং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গোলাপগঞ্জ বাজারের কলেজ রোড ও কদমতলী এলাকার অনেক বাসা বাড়ী দোকান পাটসহ বেশ কিছু স্থাপনা সুরমা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ার পথে।
এভাবে কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গোলাপগঞ্জ উপজেলার বুধবারী বাজার ইউনিয়নের কালিজুরী চন্দরপুর গ্রামসহ প্রায় অর্ধশত এলাকা। সুনামপুর ও বাঘলা বাজার বড় ধরনের ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে। এছাড়া ভাদেশ^র ইউনিয়নের মীরগঞ্জ বাজার রক্ষায় কোটি টাকার বøক বসানোর পরও ভাঙ্গন ঠেকানো যাচ্ছে না। নদী ভাঙ্গন থেকে গোলাপগঞ্জের গরীব অসহায় লোকজনসহ ক্ষতিগ্রস্থদের রক্ষা করতে জরুরী ভিত্তিতে সরকারি ভাবে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই জোর দাবী জানিয়েছেন।
