8:07 AM, 13 November, 2025

‘সাংবিধানিক অধিকার’ থাকা সত্বেও আইনজীবী পায়নি মিন্নি

minni-2

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে কোনো ধরনের আইনি সহায়তা পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন। আইনি সহায়তা পাওয়া মিন্নির সাংবিধানিক অধিকার বলেন মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী। এ নিয়ে দেশ ব্যাপী চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

মিন্নির পক্ষে আদলতে কোনো আইনজীবী না দাড়ানোর পেছনে প্রভাবশালী মহলেরর হস্তক্ষেপ রয়েছে বলেন অভিযোগ উঠেছে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান নান্টু।

বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বুধবার আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে তোলা হয় মিন্নিকে। এসময় আদলতে মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবীকে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। ফলে বিচারকের প্রশ্নের উত্তর মিন্নিকেই দিতে হয়েছে সরাসরি।

এ নিয়ে মোজাম্মেল হোসেন অভিযোগ করেছেন, ‘বুধবার সকাল থেকে অনেক চেষ্টা করেও তিনি তার মেয়ের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য একজন আইনজীবী পাননি।’

তিনি আরো বলেন, ‘যারা আসামি তাদের বাঁচানোর জন্য এখন এগুলা করতেছে। যার স্বামী মারা গেল, তাকে বাঁচানোর জন্য কী চেষ্টা আমার মেয়ে করছে, সবাই দেখছেন আপনারা। সেই এক নম্বর সাক্ষী আজ কাঠগড়ায়। এমনকি আজ আমার মেয়ের পক্ষে কোন উকিলও (আইনজীবী) দিতে পারিনি।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘কেউ যাতে তার জন্য কোর্টে না দাঁড়ায়, সেজন্য বারে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে শুনেছি।’

এমন সিদ্ধান্ত কারা নিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আয়শার বাবা বলেন, ‘এলাকার প্রভাবশালী লোকেরা ছাড়া কারা এ কথা বলতে পারে, আপনারা বুঝে নেন। আমি বলতে গেলে কী আমি দেশে থাকতে পারবো?’

এমন অভিযোগের বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান নান্টু বলেন, ‘জেলা আইনজীবী সমিতি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। উনি (আয়শার বাবা) মিথ্যা কথা বলছেন। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের হয়নি।’ ‘আয়শার বাবার সাথে আমার আদালতের বারান্দায় দেখা হয়েছে, উনি তো আমাকে কিছু বলেন নাই এ ব্যপারে’ যুক্ত করেন তিনি।

এই পরিস্থিতিতে মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী গণমাধ্যমকে দেয়া স্বাক্ষাতকারে বলেন, ‘কোনো কারণে একজন নাগরিক আইনগত সহায়তা না পেলে তার জন্য আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। এই বিষয়টি যে রকম আমাদের সংবিধানে আছে, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টের অনেক জাজমেন্টে রয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক আইনের অনেক ধারাতেও স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে।’

‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় এরকম ক্ষেত্রে অভিযুক্ত হিসেবে একজন নারী থাকলে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বরগুনা অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সঞ্জীব কুমার দাস জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাতদিনের রিমান্ড চাইলে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।

তিনি আরো জানান, তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে জানিয়েছেন, মামলার একজন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে আয়শাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও হত্যাকাণ্ডের আগে মামলার আসামিদের কয়েকজনের সঙ্গে আয়শার কথোপকথনের একটি কললিস্ট আদালতে উপস্থাপন করা হয় বলেও জানান তিনি।

এর আগে মঙ্গলবার সারাদিন ধরে পুলিশ কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

প্রসঙ্গত, ২৬শে জুন প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে দেশ জুড়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।