‘বিটিআরসি বসে নেই, সরকারের পাওনা টাকা গ্রামীণফোনকে দিতে হবে’

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ দুই মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি’র কাছ থেকে বকেয়া আদায়ে ‘অনড় অবস্থানে’ থাকার কথা জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। বলেছে, আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে সালিশের (আরবিট্রেশন) কোনো সুযোগ নেই। পাওনা আদায় না হওয়া পর্যন্ত ব্যান্ডইউথ সীমিতই থাকবে।
সোমবার (৭ জুলাই) প্রতিষ্ঠান দু’টির সংবাদ সম্মেলনের পর বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিটিআরসির আইন অনুযায়ী আরবিট্রেশনের কোনো উপায় নেই, তবে আলোচনার পথ খোলা রয়েছে। পাওনা টাকা অপারেটরদের দিতেই হবে।’
এখন আইনে না থাকলেও এ ধরনের বিরোধ মীমাংসার জন্য যে আরবিট্রেশনের সুযোগ থাকা উচিৎ স্বীকার করে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আরবিট্রেশনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে আইন সংশোধনের জন্য ইতোমধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’
তবে আইন সংশোধনের ওই প্রক্রিয়া শেষ হতে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গ্রামীণফোন সালিশের মাধ্যমে সুরাহা করার নামে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে চায় জানিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকারের পাওনা টাকা গ্রামীণফোনকে দিতে হবে। গ্রামীণফোন এ টাকা না দিলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘বকেয়া অর্থ পরিশোধ না করায় গ্রামীণফোনের লাইসেন্স বন্ধসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছে। সে ব্যবস্থার অংশ হিসেবে তাদের ব্যান্ডইউথ কমানো হয়েছে। ব্যান্ডইউথ কমানোর মধ্য দিয়ে গ্রামীণফোনকে বার্তা দেওয়া হলো যে বিটিআরসি বসে নেই, বিটিআরসি ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা আশা করি, গ্রামীণফোন পাওনা টাকা দিয়ে দেবে।’
জহুরুল হক আরো বলেন, ‘গ্রামীণফোনের কাছে যে ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি পাওয়া যাবে, সেটি কিন্তু অনেকদিনের বকেয়া। সম্ভবত ২০০৮ বা ২০১০ সালের দিকে করা অডিটে তাদের কাছে তিন হাজার কোটি টাকার মতো পাওয়া যেত। এরপর ঘটনা হাইকোর্টে গেল। হাইকোর্ট আবার ফ্রেশ অডিট করতে বললেন। সেই অডিটে জানা গেল, তাদের কাছে পাওয়া যাবে ১২ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এর মধ্যে বেশ কিছু অংশ বিটিআরসির, এক তৃতীয়াংশ এনবিআরের এবং প্রায় এক তৃতীয়াংশ ১০ বছরের সুদ।’
‘এরপর টাকা তোলার জন্য সভা ডাকা হয়। সেই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এ টাকা তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিল করা হবে। কিন্তু আমরা লাইসেন্স বাতিল না করে গ্রামীণফোনকে নোটিশ দিলাম। এরপরও টাকা না দেওয়ায় সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে তাদের ৩০ শতাংশ ব্রান্ডইউথ কমানো হয়েছে যোগ করেন তিনি।’
প্রসঙ্গত, নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুই অপারেটরের কাছে ১৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা পাওনা দাবি করছে বিটিআরসি। আর তাতে বারবারই নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে অপারেটররা প্রশ্ন তুলে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে অপারেটরদের চিঠি চালাচালির মধ্যেই এ কড়া পদক্ষেপ নিল সংস্থাটি।
