রিফাতকে হত্যা করতে যেভাবে পরিকল্পনা করে ‘০০৭’ গ্রুপ

নিউজ ডেস্কঃ বরগুনায় পথচারীদের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফ (২৩) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা পরিকল্পিত। খুনের আগের দিনই ওই পরিকল্পনা করে দুর্বৃত্তরা। ‘০০৭’ নামে ফেসবুক মেসেঞ্জারের গ্রুপে এ ঘটনার পরিকল্পনা করা হয়।
ওই গ্রুপেই নির্দেশনা দেওয়া হয়, কে কখন কী অস্ত্র নিয়ে উপস্থিত হবে ঘটনাস্থলে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ীই পরদিন সকালে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
জানা গেছে, বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র জেমস বন্ডের নামের সঙ্গে মিলিয়ে এই গ্রুপের নাম রাখা হয়েছে ০০৭। মেসেঞ্জারের এই গ্রুপটির নেতৃত্বে আছেন রিফাত হত্যাকাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড।
জানা গেছে ‘বন্ড’ অংশটি নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন নয়ন নিজেই। আর তার সেকেন্ড ইন কমান্ড রিফাত ফরাজী।
ওই মেসেঞ্জার গ্রুপের কথপোকথনের কিছু স্ক্রিনশটে দেখা যায়, ঘাতক রিফাত ফরায়েজী আগের দিন রাত ৮টার দিকে মেসেঞ্জার গ্রুপে 007 গ্রুপের সদস্যদের সরকারি কলেজের সামনে থাকার নির্দেশ দেন।
এসময় ওই গ্রুপের ‘Mohammad’ ও ‘সাগর’ নামের দু’জন জানতে চান, তাদের কোথায় ও কখন থাকতে হবে। জবাবে রিফাত তাদের বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সকাল ৯টায় থাকতে বলেন।
স্ক্রিনশটে আরও দেখা যায়, রিফাত মেসেঞ্জার গ্রুপে ‘দা’-এর ছবি দিয়ে বলেন, পারলে এইটা নিয়া থাইকো। তখন ‘Mohammad’ জবাব দিয়ে জানান, ‘দা’ নিয়ে হাজির থাকবেন তিনি।
কেবল মেসেঞ্জার গ্রুপ নয়, বাস্তবেও ০০৭ নামে একটি গ্যাং গ্রুপ পরিচালনা করেন নয়ন। দীর্ঘদিন ধরে বরগুনার কলেজ রোড, ডিকেপি, দীঘির পাড়, কেজিস্কুল ও ধানসিঁড়ি সড়ক এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে আসছেন তারা। তাদের সংকেত ছিল ০০৭। এই সংকেত নয়ন বন্ডের মোটরসাইকেল ও বাড়ির দেয়ালেও আঁকা আছে।
এলাকাবাসী জানান, মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন ও ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে যুক্ত ছিলেন রিফাত ফরাজী। এ কারণে স্থানীয়দের কাছে একটি আতঙ্কের নাম রিফাত ফরাজী।
বরগুনা সদর থানার ওসি আবীর হোসেন মাহমুদ বলেন, ‘নয়ন বন্ডের মাদক বাণিজ্যের কথা আমরা জানি। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র মামলাসহ একাধিক মামলার কথাও আমরা জেনেছি। এর আগে নয়ন ও তার সহযোগী জেল খেটেছে। জামিনে তারা বেরিয়ে যায়। রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয়নসহ সবাইকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
গত বুধবার (২৬ জুন) সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের রাস্তায় প্রকাশ্যে সবার সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তার স্ত্রী বাধা দিলেও আটকাতে পারেননি হামলাকারীদের। রিফাতের পরিবারসহ স্থানীয় সবাই বলছেন, নয়ন বন্ডের নেতৃত্বে তার সহযোগীরাই রিফাতকে হত্যা করেছে।
এ ঘটনায় নয়ন বন্ডসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন নিহত রিফাতের বাবা।
