ল্যাম্পপোস্টের সাথে বেঁধে মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতে নরেন্দ্র মোদীর শাসন আমলে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়ে এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করার সময়েই ঝাড়খন্ডে এক মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাকে ল্যাম্পপোস্টের সাথে বেঁধে ১৮ ঘণ্টা নির্যাতন করা হয়। পেটানোর সময় ওই যুবককে জয় শ্রীরাম ও জয় হনুমান বলতে বাধ্য করা হয়।
২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ঝাড়খন্ডে ১৬ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের পেছনেই সাম্প্রদায়িক উস্কানি কাজ করেছে বলে অভিযোগ আছে। এইসব হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতের উগ্রপন্থি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনকে দায়ী করা হয়েছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সংবাদ মাধ্যম আনন্দ বাজার জানিয়েছে, নির্যাতনে নিহত যুবকের নাম তবরেজ আনসারি। ঝারখন্ডের খরসোঁয়া জেলার ধক্তিদি গ্রামে গত ১৮ জুন এই ঘটনাটি ঘটে। তবরেজকে প্রথমে একটি মোটর সাইকেল চুরির সন্দেহে আটক করে বেধরক নির্যাতন করা হয়। যখন নির্যাতনকারীরা জানতে পারে আটক যুবক মুসলমান তখন নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সেই সাথে তাকে মারতে মারতে বলা হয় ‘বল জয় শ্রীরাম! বল, জয় হনুমান!’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পেটাতে পেটাতে যুবককে তার নাম জিজ্ঞেস করে কয়েক জন। তিনি বলেন, ‘সোনু।’ পুরো নাম বলতে বলা হয়। উত্তর আসে, ‘তবরেজ আনসারি।’ শোনা মাত্রই মারের মাত্রা বাড়ে। সঙ্গে ‘জয় শ্রীরাম’ বলার নির্দেশ।
সম্প্রতি ভারতে সংখ্যালুঘু নির্যাতনের বিষয়টি উল্লেখ করে দেয়া মার্কিন সরকারের রিপোর্ট ২৪ জুন খারিজ করে মোদী সরকার দাবি করে ‘ভারতে সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত’ ! ঠিক এর একদিন আগেই পুলিশ হেফাজতে মারা গেলো সেই নির্যাতিত যুবক।
তবরেজকে নির্যাতনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পরেছে ইন্টারনেটে। এই ভিডিও নিয়ে নিন্দা জানাচ্ছে ভারতের প্রগতীশীলরা।
ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, তবরেজকে পেটাতে পেটাতে লাঠিই ভেঙে যাচ্ছে এক জনের। বুকফাটা আর্তনাদ করছেন তবরেজ। অনেক পরে পুলিশ এসে তবরেজকে উদ্ধার করে চুরির দায়ে আদালতে পাঠায়। আদালত তাকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। গতকাল ২৩ জুন অবস্থা খারাপ হলে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যায় তবরেজকে। সেখানে তিনি মারা যান।
তবে সমাজকর্মীরা বলছে, তবরেজ জেলে পুলিশ হেফাজতেই মারা গেছে। হাজতে মৃত্যুর পরেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকে।
তবরেজের পরিবার জানিয়েছে, পুণেতে ঝালাই মিস্ত্রির কাজ করতেন ২৪ বছরের ওই যুবক। বাড়ি এসেছিলেন ঈদ উপলক্ষে। ১৮ তারিখে আরো দু’জনের সঙ্গে জামশেদপুর যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন তিনি। ভিডিওতে শোনা গেছে, তবরেজ বলছেন, ওই দু’জন তাকে একটি মোটরবাইকের সামনে অপেক্ষা করতে বলে গিয়েছিল। পরে দু’জনই পালায়।
