টিপু হত্যা: গোয়েন্দা জালে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান-ফ্রিডম মানিক

রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপুর একাধিক খুনি এখন গোয়েন্দা জালে।
দুবাইয়ে আত্মগোপন করা ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম জিসান আহমেদ মন্টি ওরফে জিসানের নির্দেশে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে খুন করা হয়। ফ্রিডম মানিক বর্তমানে ভারতে আত্মগোপন করে আছেন।
জানা গেছে, মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও ফ্রিডম মানিকের সঙ্গে নিহত টিপু দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিলেন। পরিবার প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা বলে এবং সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে টিপুকে খুন করার একটি নীলনকশার চিত্র পাওয়া যায়। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, টিপু খুন হতে পারেন- এমন একটি ধারণা গত সপ্তাহেই দেওয়া হয়েছিল। অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন করে টিপুকে বলা হয়েছিল- ‘চাচা আপনি খুন হতে পারেন’।
মতিঝিল ও পল্টন এলাকার দুই ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ এবং আবুল হোসেনের সঙ্গে টিপু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের টেন্ডারবাজি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, রেলওয়ে, কমলাপুর আইসিডি ডিপো, বিদ্যুৎ ভবন ও গণপূর্তের টেন্ডারবাজির একটি কমিশন বিদেশে আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও ফ্রিডম মানিককে দিতে হতো। গত ৩ বছর ধরে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কাছে এইসব টেন্ডারবাজির কোন কমিশন দেয়া হয়নি। এর জের ধরে টিপুর প্রতিপক্ষরা শক্তিশালী হয়। ওই শক্তিশালী গ্রুপটিকে দিয়ে জিসান ও ফ্রিডম মানিকের টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয় টিপু।
টিপু হত্যার ঘটনায় শুক্রবার তার স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি শাহজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘চার-পাঁচ দিন আগে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী মোবাইল ফোনে টিপুকে হত্যার হুমকি দেয়। আমার স্বামী মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন। তার মতিঝিল কাঁচাবাজার এলাকায় একটি রেস্টুরেন্ট আছে। ১০ বছর ধরে বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন দলীয় কোন্দল ছিল।’
ওদিকে এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত হন গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী প্রীতি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী তার শরীরে একটি গুলি ঢুকে অপরদিক দিয়ে বের হয়ে গেছে। এতে তিনি নিহত হন।
পুলিশের মতিঝিলি বিভাগের উপ-কমিশনার এমএ আহাদ গতকাল এই প্রতিবেদকের কাছে বলেন, নিহত টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি যে অভিযোগ করেছেন—তা পুলিশকে জানানো হয়নি। এমনকি তার স্বামীকে হত্যার হুমকির বিষয়ে থানায় পর্যন্ত কোনো জিডি করেননি। তারপরও আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। যে মোবাইল ফোন নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল- সেটি বন্ধ আছে। আমরা যাচাই-বাছাই করছি।
গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাদ আসর এজিবি কলোনি মসজিদে টিপুর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে লাশ দাফনের জন্য ফেনীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
