প্রতিবন্ধী শিল্পীর কাঁধে অসহায় মা-বাবার দায়িত্ব!

শিল্পীর বয়স চৌত্রিশ পেড়িয়ে পঁয়ত্রিশ। সে শারীরিকভাবে অক্ষম। কিন্তু তাতে কী? তারপরও নিজের কাঁধে অসহায় মা-বাবার দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন। তাদের মুখে দু’বেলা দু-মুঠো খাবার তুলে দিতে ভিক্ষা করেন তিনি।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের মধ্য জগৎপুরা গ্রামের দৃষ্টি ও মানসিক প্রতিবন্ধী হাসমত মোল্ল্যা ও ফিরোজা বেগম দম্পতির মেয়ে শিল্পী খাতুন। শিল্পীর সকালটা শুরু হয় মাথায় একরাশ চিন্তা নিয়ে। কোন সড়ক বা স্থানীয় হাটবাজারে বসে টাকা উপার্জন করবেন। কীভাবে খাবার তুলে দেবেন মা-বাবার মুখে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শিল্পীর দুটি পা বিকল। তিনি হামাগুড়ি দিয়ে চলাচল করেন। মা-বাবাকে নিয়ে তারাকান্দি-ভূঞাপুর সড়কের পাশে উপজেলার জগৎপুরা গ্রামে বসবাস করেন। তাদের ঘরে নেই বিদ্যুতের আলো। একটি টিউবওয়েল থাকলেও সেটি দীর্ঘ দিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায় , উপজেলার অজুর্না ইউনিয়নের জগৎপুরা গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাসমত মোল্ল্যা (৮০)। ছোট বেলায় জ্বর হওয়ার পর চিকিৎসার অভাবে দৃষ্টিশক্তি হারান। বসতবাড়ি থাকলেও যমুনার ভাঙনে তা বিলীন হয়ে গেছে। পরবর্তীতে মধ্য জগৎপুরা সড়কের পাশে একটি টিনের ঘর তুলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস শুরু করেন। স্ত্রী ফিরোজা বেগম মানসিক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী এবং মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। পরিবারের তিন সদস্য প্রতিবন্ধী হলেও সরকারি কোনো ভাতা পান না তারা। এমনকি কোনো সাহায্য ও সহযোগিতাও পাননি তারা। ফলে জীবন বাঁচাতে শারীরিক অক্ষম শিল্পী রাস্তায় ও হাটবাজারে বসে ভিক্ষা করেন।
প্রতিবেশী সুফিয়া বেগম জানান, তাদের কষ্টের শেষ নেই। প্রতিবন্ধী মেয়ে মা-বাবার দায়িত্ব পালন করছেন। মেয়েটি ভিক্ষা করে যে টাকা উপার্জন করে, তা দিয়ে তিন বেলা খাবারও জোটে না তাদের।
অর্জুনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল আলম খান মাহবুব বলেন, প্রতিবন্ধী পরিবারের বিষয়টি জানতে পেরেছি। তাদের তালিকা তৈরি করে সমাজসেবায় জমা দেওয়া হবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শহীদুজ্জামান মাহমুদ বলেন, আমরা ওই পরিবারটির কথা জানতে পেরেছি। তারা যদি সমাজসেবা অধিদপ্তরে আসে, তাহলে তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় নিয়ে আসা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ইশরাত জাহান বলেন, তারা যদি সরকারি ভাতা পাওয়ার যোগ্য হয়, তাহলে দ্রুত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভাতার আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হবে।

Thanks for sharing. I read many of your blog posts, cool, your blog is very good.