পঞ্চগড়ে আক্তারি পেলেন হুইল চেয়ার স্বামীর কাধে চড়ে আর নয় ভিক্ষা

গত কয়েকদিন আগে স্বামীর কাধে বসে পঞ্চগড় শহরের সড়কে হাটছেন এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
আক্তারি বেগম (৪৫)। শ্বারীরিক ভাবে অচল, হাটাচলা করতে পারেননা। স্বামী ইউনুস আলীর (৭০) কাধে চড়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়ান। ছবটি নজরে আসে শেখ মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক পুলিশ সদস্যের। পরে তিনি আক্তারি বেগমকে একটি হুইল চেয়ার উপহার দেন।
শেখ মোস্তাফিজুর রংপুর জেলা পুলিশে সহকারি শহর উপ পরিদর্শক (এটিএসআই) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
রোববার বিকেলে তার পক্ষ থেকে পঞ্চগড় জেলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে আক্তারি বেগমকে হুইল চেয়ারটি তুলে দেন সাংবাদিক আবু নাঈম, সাংবাদিক রাশেদুজ্জামান, একরামুল হক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক বিপ্লব হোসেন ও আল মামুন।
আক্তারি-ইউনুস দম্পতি জানান, তাদের পৈত্রিক বাড়ি নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর বিহারী পল্লীতে। তাদের রয়েছে দুই কন্যা সন্তান। গত কয়েকবছর আগে সেখান থেকে চলে আসেন দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জে। দিনমুজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন ইউনুস। এরই মধ্যে পড়ে গিয়ে কোমরে চোট পান আক্তারি। অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। কিছুদিন আগে তাদের বড় মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়ের খরচ জোগাতেই ভিক্ষা করছেন তারা। সারা দিন ভিক্ষা করে ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশন রাত যাপন করছেন।
হুইল চেয়ার পেয়ে পুলিশ সদস্য শেখ মোস্তাফিজুরকে ধন্যবাদ জানিয়ে আক্তারি বেগম বলেন, একসময় স্বামীসহ দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতাম। একসময় কোমড় ভেঙে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় আমার হাঁটাচলা। আমরা গরীব মানুষ হুইল চেয়ার কেনার টাকা নাই। মেয়ের বিয়ে দিবো তাই ভিক্ষা করার জন্য স্বামীর কাধে চড়েই জেলায় জেলায় ঘুরি। আজ আমাকে যে পুলিশ ভাই হুইল চেয়ার দিয়ে সহযোগীতা করলো তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আজ থেকে আমার স্বামীর কষ্টটা কমে যাবে।
আক্তারী বেগমের স্বামী ইউনুস আলী বলেন, আমার পঙ্গু স্ত্রীকে কাধে নিয়ে আমি ভিক্ষা করি। আমার সার্মথ্য না থাকায় তাকে হুইল চেয়ার কিনে দিতে পারিনি। শেখ মোস্তাফিজ ভাই যে উপকার করলো তার ঋণ আমি কোন দিন শোধ করতে পারবো না। খুব ভাল লাগছে, আমার স্ত্রী এখন হুইল চেয়ারে বসে চলতে পারলে আমার কষ্ট অনেকটা কমে যাবে।
পুলিশের এটিএসআই শেখ মোস্তাফিজুর বলেন, আমি হঠাৎ করে গক কয়েক দিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখতে পাই এক বৃদ্ধ তার স্ত্রীকে কাধে করে নিয়ে মানুষের কাছে সহযোগীতা চেয়ে বেড়াচ্ছে। এটা দেখার পর থেকেই পরিচিতজনদের মাধ্যমে তাদের খোঁজ করি এবং সন্ধান চেয়ে পঞ্চগড়ের গ্রুপেই স্ট্যাটাস দেই। পরে রোববার দুপুরে খবর পাই পঞ্চগড়ে আগের মতই স্ত্রীকে কাধে নিয়ে ভিক্ষা করছেন ইউনুস আলী। সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাছে লোক পাঠাই এবং রংপুর থেকে একটি হুইল চেয়ার কিনে বাস যোগে পঞ্চগড়ে পাঠাই। পরে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে সেটা আক্তারিকে তুলে দেয়া হয়। আমি গর্বিত এমন একজন অসুস্থ্য ও অসহায় দম্পতির পাশে দাঁড়াতে পারে।
