মোঃ সফিকুল ইসলাম শরীফের “কাগজের টুপি “

ঠিক পশ্চিম কোনাকোনি সন্ধ্যার আকাশে তৃষ্ণার্তের কাকের মতো তাকিয়ে থাকতাম আমি ও আরও কতোজন! উৎসুক সকলের আকাঙ্খার শেষ নেই। এই বুঝি চাঁদ উঠলো। ইদের চাঁদ। মনে মনে কতো ভাবনা। বার বার কল্পনায় ভেসে ওঠছে সন্ধ্যার আকাশে শরু শুভ্র বাঁকা ইদের চাঁদ। অবশেষে তৃষ্ণার জল হয়ে পশ্চিম আকাশে দেখা দিল সেই কাঙ্খিত ইদের চাঁদ। পুরো এলাকা জুড়ে উল্লাসের মাতোয়ারা।
শৈশবের এই মুহূর্তটা বড় বেশী মনে পরে আজ। চাঁদ উঠার সাথে সাথেই শীতুদের সাদা-কালো টিভি থেকে ভেসে আসতো সেই চিরচেনা ভালোলাগার সুর, ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ইদ। সেদিন রাতটা যেন কাটতেই চাইতো না। সকাল হলেই সবাই মিলে গোমতী নদীতে গোছল সেরে ঘরে ফিরে শীতের কাঁপুনিতে থরথর করে ঘরের দরজায় আসতেই আম্মা তার কাপড়ের আঁচলটা খুলে আগে মাথাটা তারপর পুরো শরীরটা মুছে দিলে কাপুনি কিছুটা কমে যেত।
যাইহোক তেল-তুলা দিয়ে অবশেষে ইদের তিন দিন আগে থেকে রাতে, সকালে, দুপুরে একটু একটু করে দেখে আবার কেউ দেখে ফেলার ভয়ে রেখে দেয়া সেই মোটা চামড়ার ভারি জুতা, সেই লাল- সাদার ফুল আঁকা ইদের শার্ট, মোটা জিন্স কাপড়ের হাফপ্যান্ট আর ৫ টাকার প্লাস্টিকের ঘড়ি পরে বড় ভাই আর আব্বার সাথে রওনা করতাম ইদগাহে।
আব্বা সাদা রঙের লম্বা টুপি পড়তেন আর বড় ভাই সাদা প্লাস্টিকের গোল টুপি পড়তো। আমার কিন্ত তাদের মতো এমন টুপি ছিলনা। আমার জন্য ছিল কাগজের টুপি। ইদগাহে যাওয়ার পথে মাছ বাজারের কালি মন্দিরের কাছে বটগাছটার নীচে পিরামিডের মতো উঁচু টাল দিয়ে বিক্রি হতো এই কাগজের টুপি। মূল্য মাত্র দুই টাকা। পেপারের কাগজের উপর রঙ্গিন বালি কাগজের মলাটে বাঁধাই কড়া এই কাগজের টুপি। অবশ্য তখনও যে কেও এখনকার মতো টুপি পড়তো না তা কিন্তু না। কিন্তু আমরা যারা কাগজের টুপি পড়তাম তা কেন পড়তাম তা শুধু নব্বুইয়ের দশকে মধ্যবিত্ত পরিবারের যারা পড়তো তারাই ভালো বলতে পারবে। আমি না হয় নাইবা বললাম।

আজ এতোদিন পর এই টুপির কথা মনে পরে গেল কেন জানি না। হয়তো অতীতের শান্তীর ছায়া তলে চিন্তা হীন সুখের সময়গুলো মনে করতেই মনে পরেছে এই কাগজের টুপি।
আজও ইদের আনন্দ হয়। সবই আছে আগের মতো। শুধু কাগজের টুপিটা নেই কোথাও।
