ঐক্যের বার্তায় পবিত্র হজ্বের হাফেজ মাওলানা উবায়দুর রহমান

ইসলামি শরিয়তে হজ্ব একটি আবশ্যকীয় পালনীয় বিধান, প্রত্যেক মুসলিম তা পালন করার মাধ্যমে নিজেকে সৃষ্টিকর্তার অনুগত করে নেওয়ার বড় একটি সুযোগ খুজে পায়।
এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ মানুষের উপর আবশ্যক হলো আল্লাহর উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহ আগমনে হজ্ব সম্পাদন করা যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। আর যে লোক তা মানে না। আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরোয়া করেন না। সুরা আল-ইমরান আয়াত নং ৯৭ হজ্ব পালনে যেমন সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ মেনে তার অনুগত হওয়া যাই তেমনিভাবে বিশ্ব মুসলিম ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বার্তা পূরো বিশ্ববাসী কে জানান দেওয়া যায়। সমগ্র পৃথিবী থেকে আগত মেহমানদের( আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক) ধ্বনি গুলো যেমন রবের দরবারে একত্ববাদের সাক্ষী দেয় তেমনি তাদের প্রতিটি কাজকর্ম বিশ্ব দরবারে মুসলমানদের ভ্রাতৃত্ব আর ঐকবদ্ধতার জানান দেয় । যেমন সাদা কালো ধনী গরীব রাজা প্রজা স্বদেশী আর ভীনদেশী একি কাতারে একি কাপরে একি সাথে তাওয়াফের যাবতীয় কার্যাবলীর শেষান্তে সিজদায় অবনত মস্তিষ্কে নিজেদের লুটিয়ে দেয়।
কখনো একি সাথে করে নিদর্শনে ভরপুর সাফা মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের প্রদক্ষিণ কখনো খোলা আকাশের নিছে আরাফা মুজদালিফায় দু’হাত তুলে মনের সমস্ত ব্যাকুলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় আবার সবচেয়ে পছন্দসই পশুকে উৎসর্গ করে মনের বাকিটুকু তৃপ্তি মিটানোর ব্যার্থ চেষ্টা চলতে থাকে শয়তানকে লক্ষ করে পাথর ছুড়ে মারার আগ পর্যন্ত ।
মক্কার আকাশ বাতাসে ভেসে আসে সম্মীলিত সে এক মহা প্রবিত্র গুঞ্জন। লাব্বাঈক আল্লাহুমা লাব্বাঈক লাব্বাঈক লা শারিকালাকা লাব্বাঈক ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিইমাতা লাকাওয়াল মুলক লা শারিকালাকা। অর্থঃ হাজির তোমার সমিপে আল্লাহ,আমি হাজির, তোমার কোন শরিক নেই নিশ্চয় সমস্ত প্রশংসা তোমারি. সমস্ত নিয়ামত এবং রাজত্ব তুমারই তুমার কোন শরিক নেই।
প্রকৃতপক্ষে হজ্জের এসব কার্যাবলী রবের সাথে বান্দার মধুময় সম্পর্ক স্হাপনে মন ও মননের উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে মুসলিম জাতির ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্যবদ্ধতার জানান দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। আর একথা সূর্যের আলোর ন্যায় দিবালোকের মত স্পষ্ট যে মুসলমানদের সর্ববৃহত জমায়েত হলো এই হজ্ব, যে রোকনটি আদায় করার জন্য মনের আবেগ ভালবাসা উচ্ছাস নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মক্কায় জমায়েত হয় লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতা।
এ সময় সকলে ভাই ভাই হয়ে কাঁধে কাঁধ হাতে হাত রেখে হজ্জের সমস্ত কার্যাবলী সমাধান করার ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিকভাবে মুসলমানদের ঐক্য আর ভ্রাতৃত্বের পথ অতি সূগম হয়। এ মর্মে কুরআনে বলা হয়েছে ঃতোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। সূরা আল ইমরান আয়াত নংঃ ১০৩
বর্তমান বিশ্বের আনাচে কানাচে মুসলিম জাতি নির্যাতিত নিপীড়িত ও অবহেলিত. যার কারণ স্বরুপ বিবেচনা করা হচ্ছে তাদের স্বজাতীয় ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যবদ্ধতাকে৷বিশ্বের চারদিক থেকেই এই ঐক্যবদ্ধতা নামক নিয়ামতের কর্মপন্থার দিকে তাকিয়ে আছে পুরো বিশ্বজাতি, প্রয়োজন ঐক্যের প্রয়োজন ভ্রাতৃত্বের প্রয়োজন একে অপরে সহানুভূতির পাশাপাশি পৈচাশিক জুলুম নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধের মাধ্যমে জবাব দেওয়ার৷তাই এ দৃষ্টিকোন থেকে বলা যায় যেহেতু হজ্বে সকলের আচার অনুষ্ঠান এক ও অভিন্ন যেখানে রয়েছে লক্ষ প্রাণের আবেগ ও অনুভতির মিল তাই এ বিষয়গুলোর মাধ্যমেও বিশ্বকে দেখানো যেতে পারে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যবদ্ধতার উপমা।
