পৃথা চক্রবর্তী’র “ডাক”

ডাক
ঘরে ঢুকেই গন্ধের উৎসটা দেখতে পেলাম। আসলে বাড়িটার যত কাছে আসছিলাম তীব্র হচ্ছিল গন্ধটা। দিদির সঙ্গে প্রায়ই আসি আমি এ বাড়িতে, কিন্তু এ গন্ধ টা সেভাবে পাইনি। দুয়েকবার হালকা ইশারার মত ভেসে এসেছে বাতাসে, সে যে এ বাড়ির থেকে বুঝিনি।
অবাক ব্যাপার, এ তো দোপেয়ে! মানুষের শরীরে এমন গন্ধ হয় নাকি! অদ্ভূত তো!
আধবুড়ি হবে মানুষ টা, মেয়ে প্রাণী। চলন বলন সবই তো ওদের, তবে গন্ধ টা???
কাছে এগিয়ে গিয়ে বসলাম, বার বার দেখছি, শুঁকছি, ও হাসছে, আমায় জড়িয়ে নিলো, চেটে দিলাম আমিও। মাথা নিচু করে মুখের কাছে এসে হাসতেই দেখতে পেলাম, কুকুর দাঁত .. মানুষদের চে বড়োই যেন একটু। চোখে হাসি।
******
রাতে শুয়েছি, দিদি ঘুমিয়ে পড়েছে অনেকক্ষন। অন্য দিন আমিও ঘুমোই ওর সঙ্গে। আজ ঘুমোই নি। আজ পূর্ণিমা, ১৫ দিন আগের ঘটনা টা কেন যেন মনে পড়ছে। কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে। হাওয়ায় সোঁদা গন্ধ, এবার একটু ঝিমুনি আসছে।
গন্ধ বদলে যাচ্ছে, সেই গন্ধ, আবার ফিরে আসছে তীব্র হয়ে… এতো রাতে, উঠি তো।
গন্ধের টানে ছাতে এসেছি, অন্যদিন তালা থাকে, আজ খোলা।
মেঘ কেটে চাঁদ বেরিয়ে এসেছে। একটা আবছা রাস্তা যেন ঘুরে ঘুরে যাচ্ছে… পা বাড়ালাম।
ধোঁয়াটে রাস্তা, পেছনের চেনা পাড়া আর নেই। আমি কোথায় যাচ্ছি???
শুধু গন্ধ, ম ম করছে চারদিক, দূরে ঝাপসা কারা ওরা, …. একটা দল … কাদের?
আরেকটু এগিয়েই স্পষ্ট হলো, নেকড়ের দল একটা, সামনে দলপতি… বিশাল এক নেকড়ে।
ওরা এগিয়ে আসছে, আমি পিছিয়ে যেতে পারছিনা। ওদের জংলী গন্ধ , হলুদ চোখ আমায় সম্মোহিত করে রেখেছে যেন।
এগিয়ে এসেছে দলপতি, তার থাবার নীচে আমার গলা, সরু মুখ আর জোরালো চোয়াল নেমে আসছে… আসছে
কিন্তু এতো নেকড়ের পা নয়, তবে??
দূর থেকে কার ডাক ভেসে এলো, ‘না বাক, ছাড়ো’ দলপতি মুখ ঘোরালো, তখন ই সামনে এলো আর একটা ধূসর নেকড়ে, মাদী। কাছে এসে দলপতির গলায় মুখ রাখলো, ‘ও আমাদের ই গোষ্ঠী’। দলপতি থাবা তুলে নিল, দেখলাম আমার মতই। সে সরতেই স্পষ্ট হলো সেই চোখ, সেই গন্ধ। চোখ হাসছে।
দলের সবার সঙ্গে আমিও ওপরে তাকালাম, পূর্ণ চাঁদ। আমাদের ডাকতে হয় এমন সময়।
********
দিদি এক ধাক্কা দিয়ে উঠিয়ে দিলো, ‘কী হচ্ছে কী, মাঝরাতে হাউলিং করছিস কেন? নিজেকে নেকড়ে ভাবছিস নাকি। তোর জন্য বাকিরাও ডাকছে দেখ।’
জানলা দিয়ে ভেসে আসছে বহু কুকুরের ডাক, আমিও ডাকলাম, ওপর দিকে মুখ তুলতেই চাঁদের গায়ে মেঘের ছায়ায় অস্পষ্ট কাদের দেখলাম যেন। মন টা হঠাৎ একসঙ্গেই আনন্দ আর মন খারাপে ভরে গেল। জিভ বার করে দিদিকে লম্বা করে চেটে দিলাম একটু, তারপরে ওর কোলে ঢুকে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। কানে লেগে আছে সেই সুর, নাকে সেই গন্ধের আমেজ।
