11:29 PM, 12 November, 2025

সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের বিছনাকান্দি

received_234780941332054

মোঃ রুবেল আহমদ, সিলেট : ভারত থেকে প্রবল বেগে শীতল জলস্রোত ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের দিকে, মিশে যাচ্ছে বিছনাকান্দির রূপবতী নদীতে। স্রোতেরা বয়ে যাচ্ছে ছোট-বড় অসংখ্য পাথর পেরিয়ে। আর সেই পাথরে মাথা রেখে শীতল জলে গা ডুবিয়ে-ভাসিয়ে শুয়ে থাকছে মানুষ। এটি যেন বিছনাকান্দির এক নৈমিত্তিক দৃশ্য।

এই স্বচ্ছ শীতল জলের উৎপত্তি কোথায় থেকে তা দেখার উপায় নেই। কেননা ওপাশেই যে ভারত সীমারেখায় বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা ভিন্ন জনপদ। এপাশে বিজিবি’র সশস্ত্র আনাগোনা আর ওপাশে বিএসএফ’র সতর্ক চোখ। সীমানা পেরোলেই গর্জে উঠতে পারে রাইফেল! তাই অনেকটা স্বাধীন আর অনেকটা সীমাবদ্ধ অবস্থানে থেকে গিলে খেতে হয় বিছনাকান্দির অপার সৌন্দর্যকে।

বিছনাকান্দিতে যাওয়ার সময় সড়কপথের দুপাশে চা বাগান, নদী, অবারিত সবুজ মাঠ আর ছোটখাটো বনাঞ্চল, দৃষ্টিকে দেবে অন্যরকম সুখ। সড়কপথ ফুরিয়ে যখন নৌকায় যাবেন, তখন অন্য রকম দৃশ্য দেখতে পাবেন।

সরু নদীর দুপাশে পাথরের সাম্রাজ্য আর সবুজের গালিচা পেছনে রেখে যতোই সামনে এগোবেন, ততোই আপনার চোখের সামনে উন্মুক্ত হতে থাকবে ওপারের বিশাল সব মেঘে ঢাকা পাহাড়, যেনো কোনো শিল্পীর আঁকা বিশাল ক্যানভাস কেউ বসিয়ে দিয়েছে যত্ন করে! এমন মুগ্ধ বিস্ময়ের ঘোর না কাটতেই নৌকা আপনাকে নামিয়ে দেবে বিছনাকান্দির শেষ প্রান্তে সেই সুন্দরের কেন্দ্রে।

যেভাবে যাবেন : সিলেট শহর থেকে প্রথমে পাড়ি দিতে হবে দেড়-দুই ঘন্টার সড়ক পথ, যেতে হবে গোয়াইনঘাট উপজেলার হাদারপার বাজার পর্যন্ত। পথে অনেকটা জায়গায় খানাখন্দ, তাই গাড়ি না নিয়ে সবচেয়ে ভালো হয় হালকা যান ব্যবহার করলে। ১০/১২ জনের দল হলে এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত বাহন হচ্ছে লেগুনা। ভাড়া নেবে সারাদিনে ২৫০০-৩০০০ টাকা। আর শহরের আম্বরখানা থেকে লোকাল সিএনজি অটোরিকশা যাবে প্রতিজনে ১০০ টাকা ভাড়ায়।

লেগুনা বা সিএনজি থেকে হাদারপার বাজারে নেমে মিনিটখানেক হাঁটলেই নদীর ঘাট, ঘাটে পাবেন ছোট-বড় নানান আকারের ইঞ্জিনচালিত নৌকা। সেখান থেকে নিজেদের প্রয়োজনমতো ভাড়া করে ফেলবেন নৌযান। ৪/৫ ঘন্টার জন্যে ভাড়া নিতে চাইবে ১৫০০-২০০০ টাকা। ভাড়া আরেকটু কমাতে ভাব দেখাবেন এমন, যেন নৌকা না পেলে হেঁটেই যেতে পারবেন। এই নৌযাত্রায় সময় লাগবে ৪০/৪৫ মিনিট।

যা করতে মানা:
১) প্রথমেই জেনে নেবেন আমাদের দেশের সীমানা কোন পর্যন্ত। নতুবা সীমানা অতিক্রম করে গুলি খেয়ে ফেলতে পারেন! সেখানে তেমন কোন সীমানা প্রাচীর বা কাঁটাতার নেই। তাই সাবধান! দেখে-শুনে-বুঝে পা ফেলবেন।

২) অবশ্যই সাথে খাবার প্যাকেট নেবেন না। হাদারপার বাজারে সুস্বাদু ছোলা-পেঁয়াজু-খিচুড়ির চমৎকার সব দোকান আছে। সেখান থেকে নাস্তা বা খাবারের কাজ সেরে নিতে পারেন, তাও আবার নামমাত্র মূল্যে।

৩) স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে দুর্ব্যবহার করবেন না।

৪) পানিতে নেমে গা ভেজানোর সময় অসতর্ক থাকা যাবে না। প্রচণ্ড স্রোতে ভেসে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

সিলেটের বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের জন্য:
ঢাকার কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন ৪টি ট্রেন ছাড়ে সিলেটের উদ্দেশে। সিলেটে পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় ৭ ঘণ্টা। ট্রেনে আসতে গেলে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা উপবন এক্সপ্রেসে আসাটাই সবচেয়ে ভালো। এছাড়া বাসেও আসা যাবে। ঢাকা-সিলেট সড়কে বিভিন্ন মানের অসংখ্য বাস চলাচল করে। এর মধ্যে গ্রিন লাইন, শ্যামলী, হানিফ, সোহাগ, ইউনিক, এনা পরিবহন উল্লেখযোগ্য। ভোর থেকে শুরু করে রাত ১২.৩০টা পর্যন্ত এসব বাস পাবেন। বাসে সময় লাগবে প্রায় ৫ ঘণ্টা।

থাকবেন কোথায় :
সিলেটে রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট। পর্যটকরা তাদের পছন্দের যেকোনো জায়গায় অবস্থান করতে পারেন। অত্যাধুনিক মানের হোটেল রোজভিউ, স্টার প্যাসিফিক ছাড়াও রয়েছে হোটেল গার্ডেন সিটি, হোটেল ডালাস, ফরচুন গার্ডেন, গার্ডেন ইন, পর্যটন মোটেল, হোটেল অনুরাগ, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল সহ বেশ কিছু হোটেল। শহরতলীতে রয়েছে কয়েকটি রিসোর্ট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য খাদিম পাড়া এলাকায় অবস্থিত নাজিমগড় রিসোর্ট এবং খাদিম চা বাগান এলাকায় অবস্থিত শুকতারা প্রকৃতি নিবাস।

মনে রাখবেন, সিলেটের বিছনাকান্দিতে যাওয়ার সবচেয়ে উত্তম সময় হচ্ছে বর্ষা ও বর্ষাকাল পরবর্তী সময়।

DB/F/S

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *