নবাবগঞ্জে করোনায় দেখা নেই মৌসুমী নেতাদের

বিশ্ব যখন করোনায় আতঙ্কে, তখন একই কারনে ঘর বন্দি হয়ে পড়েছে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার প্রায় সকল শ্রেনীর পেশাজীবি মানুষ। সঠিক ভাবে সরকারি তহবিলের ত্রান সামগ্রী বিতরণ না হওয়ার কারনে মূখ থুবড়ে পড়েছে জনজীবন।
নির্বাচন এলে সব সময় জনগণের পাশে থাকাসহ কত প্রতিশ্রুতিই না দেন নেতারা। আবার নির্বাচন না আসা পর্যন্ত তাঁদের আর জনগণের খবর নেওয়ার দরকার পড়ে না। চলমান করোনায় বিষয়টি আবারও প্রমাণিত হলো। এই সংকটময় মুহৃর্তেও দিনাজপুরের, নবাবগঞ্জের জনগণের পাশে নেই সেই সময়ের কোনো নেতাই। করোনার প্রাদুর্ভাবের এই দুঃসময়ে নেতাদের পাশে না পেয়ে এলাকাবাসীর মুখে মুখে এমন কথা শোনা যাচ্ছে।
নির্বাচন এলেই বিভিন্ন সরকারি বা বিরোধী দলের এক বা একাধিক নেতা নির্বাচনের জন্য জনগণের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন।কথার ফুলঝুড়ি জনগণের পাশে থাকবার অঙ্গীকার করেন। এসব নেতার মধ্যে অনেকেই কোটিপতি। তাঁদের কেউ কেউ সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করেন।
পরাজিত কিংবা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন কিংবা পরাজিত হয়েছেন এসব নেতার অনেকে কোটি টাকা ব্যয় করেছিলেন বলে আলোচনা আছে। কিন্তু এখন কোটি টাকার আওয়াজ দেওয়া সেই নেতাদের প্রায় ৮০ শতাংশের কোনো খবর নেই।
নির্বাচন এলে অনেক নেতারা কথায় কথায় কোটি টাকার আলাপ করেন। তাঁদের অট্টালিকা রয়েছে উপজেলা শহরে, রয়েছে অনেক মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখন দেশের দুঃসময়ে সেসব নেতা কই, করোনারসংক্রমণ প্রাদূর্ভাবের এই দুঃসময়ে নবাবগঞ্জ উপজেলার কোটি টাকার মালিক নেতাদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন মন্তব্য ঘুরে-ফিরে আসছে।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন শুধু সরকারি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমেই ব্যস্ত। করোনায় কর্মহীন শ্রমজীবী ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে অনেক সেচ্ছাসেবি সংগঠন।
কিন্তু দলীয় হিসাবে বলতে গেলে বিএনপি নামমাত্র ত্রাণ বিতরণ করেছে। জাতীয় পাটিকে খুজেই পাওয়া যায়নি মাঠে, জামায়াত ছিল সুরুর দিকে। খোদ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই জনগণের পাশে নেই। যদিও নেতাদের দাবি, প্রকাশ করার জন্য তাঁরা ত্রাণ বিতরণ করেননি। বিপরীতে সংসদ সদস্য নিজস্ব তহবিল থেকে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে অসহায় শ্রমজীবী ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
তবে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন রাজনৈতিক নেতারা। এ ব্যাপারে জামায়াতের জেলা আমির মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা জেলায় দুই দফায় এক হাজার ৩০০ জন ব্যক্তির মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছি। এর মধ্যে ছিল পাঁচ কেজি চাল, পাঁচ কেজি আলু, এক কেজি লবণ, এক লিটার তেল, এক কেজি মশুর ডাল ও একটি সাবান; যার ব্যয় পুরোটা আমাদের কর্মীরাই দিয়েছে।’
জনগণের পাশে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সংসদ সদস্য আজিজুল হক চৌধুরী বলেন, ‘রোজার শুরু থেকে মানুষের মাঝে সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য করেছি। যা আমি প্রচার করার পক্ষে নই। ১৫ রমজানে পর আরো সাহায্য করা হবে।’
নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ১০০ জনের মধ্যে চাল, ডাল, তেল, মুড়ি, ছোলা ইত্যাদি বিতরণ করেছি। তবে তাগণমাধ্যমে প্রচার করিনি আমি ব্যাক্তি গত ভাবে বিতরণ করেছি ।’
বিএনপির নবাবগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মো. সাহাবুদ্দিন সুজন বলেন, ‘উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছি ২০০০ পরিবারের মাঝে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রায় ৫০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছি।
সাহাবুদ্দিন সুজন আরো বলেন, গত শনিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা: এ জেট এম জাহিদ হোসেন এর পক্ষে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সএ কর্মরত চিকিৎসক ,নার্স কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে পিপিই প্রদান করা হয়েছে।বিএনপির হেয়াতপুর ওয়ার্ড সভাপতি মোঃ আহাদ আলী বলেন, আমি আমার এলাকার দুই শতাধিক পরিবারের মাঝে ব্যক্তিগত ভাবে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি।
মরহুম সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের উত্তর সুরি নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনয়ির সহ সভাপতি মরহুম আবুবক্করের মেজো ছেলে এবং পলাশবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের বি এস সি শিক্ষক আবু তাহের বকুল বলেন, আমি ব্যক্তি গত ভাবে প্রায় ১৫০টি পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। পাশাপাশি তিনি আরো বলেন ত্রানের কার্যক্রম এখনো অব্যাহত আছে।
এ বিষয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য শিবলী সাদিক বলেন, ‘চলমান করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আমার নির্বাচনী এলাকার ৫০ হাজার লোকের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম বিতরণ চলমান রয়েছে। এটি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে ত্রাণের পরিমাণ আরো বাড়বে।
এ ব্যপারে তিনি আরো বলেন, জনগণের পাশে গিয়ে কে থাকল আর কে থাকলো না সেটা বিবেচনা করবে জনগণ কিন্তু আমার যেটা দায়িত্ব কর্তব্য আমি পালন করার চেষ্টা করতেছি আর এই সময় কোন রাজনিতি করার সময় নয়। আমি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি তারা যেন খাদ্যের কারনে রাস্তায় না বেরিয়ে পড়ে।এই মুহূর্তে নেতা থেকে শুরু করে সমাজের বিত্তবানদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহব্বান জানান।’
