কাজ নেই, বসে বসে দিন পার করছেন হোসেনপুর কর্মকাররা

আর মাত্র ১০ দিন পরেই সারাদেশে উদযাপিত হবে রমজানের ঈদ। আর এ ঈদকে সামনে রেখে বেড়ে যেতো কিছুটা দা-বটিসহ নানা চাহিদা। সেই সঙ্গে কিছুটা কামার পাড়ায় ব্যস্ততাও থাকতো। তবে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর কামার পাড়ায় এবার তেমন ব্যস্ততা নেই বলাই চলে, অলস বসে বসে দিন পার করছেন গল্প গুজব করে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের করোনা মহামারিতে দা, বটি, ছুরি, চাকু তৈরি তে হোসেনপুর কামার শিল্পের উপর কঠিন বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
আড়াইবাড়িয়ার এলাকার নকুল চন্দ্র কর্মকার জানান, কিছু দিন পরেই রমজানের ঈদ। অন্যান্য বছর এই সময়টায় হালকা পাতলা কিছু কাজ থাকতো। মোটামোটি কারো সঙ্গে কথা না বলে ব্যস্থ সময় পার করতাম। কিন্তু এবার তো কোন কাজেই নেই। তাই কাকের মতো চেয়ে থাকতে হয় কাজের আশায়। একজন খরিদ্দার আসলে সবার হাঁক-ডাক পড়ে যায়।
একই এলাকার অারেক কর্মকার জানান, প্রতিযোগিতা করে কাজ নিয়ে দিন শেষে খোড়াকির টাকাও হয় না। তাদের তৈরি দা, বটি, চাকুসহ অন্যান্য জিনিস মজবুত হওয়া হলেও চাকচিক্যের কারণে ক্রেতারা মেশিনের তৈরি ছুরি-চাকুর দিকে ঝুঁকছে ক্রেতারা। আর ছুরি-চাকু তৈরির কাঁচামাল লোহা আর কয়লার দাম বছর বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এতে করে তৈরি জিনিসের দাম পড়ছে বেশি। আর এ বাড়তি দাম দিয়ে কর্মকারদের কাছ থেকে ছুরি-চাকু কিনতে চান না ক্রেতারা এমনিতেই, তার পরেও করোনা মহামারিতে কাজ একে বারেই নেই।
এদিকে কর্মকার শিল্পের মালামাল বিক্রি করা হার্ডওয়ার ব্যবসায়ীরা জানান, সারা বছর তাদের বিক্রি কম থাকলেও ঈদকে উপলক্ষে করে তাদেরও বিক্রি বেড়ে যায়। এইবার তো একেবারেই বেহাল অবস্থা যা আর মুখে ভাষা প্রকাশ করার মতো না। তবে এবা কার বেঁচা-বিক্রি আশানুরূপ নয়। মেশিনের তৈরি জিনিস, লোহার দাম বৃদ্ধি এবং দেশে করুণ পরিস্থিতি মহামারি করোনা আসা অন্যান্য বছরের তুলনায় এইবার বিক্রি নাই বলা চলে।
হোসেনপুর বাজার মিষ্টি পট্রি রোড়ের পুরনো হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী রুবেল স্টোরের মালিক রুবেল আলম জানান, অন্যান্য বছর মওসুমের এমন সময় ক্রেতা সামলাতে হিমসিম খেতেন। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেও ক্রেতাদের খুব একটা আনাগোনা চোখে পড়ে না। দোকানে বসে অনেকটা অলস সময় পার করছি।
একই অভিমত এলাকার ফুটপাতের ব্যবসায়ী কাজল সরকার কর্মকার ও হোসনপুর বাজার হার্ডওয়ারের মালিক কাজী শফিউল্লাহ। তারা জানান, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, চায়না জিনিসের প্রভাব তো আছেই। তারপরেও এবার মড়ার ওপর খাড়ার ঘায়ের মতো এসে যোগ হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মহামারি করোনা । কিশোরগঞ্জ বৃহত্তর হাওড় ভাটি অঞ্চলের ফসল কিছুটা ভালো হওয়ার কারণে এই অঞ্চলের কৃষক এবং কৃষি নির্ভর ব্যবসায়ীরা প্রায় স্বস্থি পেয়েছি । এখনকার অবস্থা হলে বাচাঁ দায় হতো। বেচা-কেনা না থাকায় ঈদের আমেজ নেই তাদের পরিবারে।
