2:00 AM, 13 November, 2025

করোনা মহামারীর আতংকে একজন ইউএনও’র স্ত্রীর বোবাকান্না

IMG_20200330_214351
মানব জাতির ইতিহাসে বিভিন্ন সময় মহামারী দেখা দিয়েছে। কখনো প্লেগ, কখনো গুটিবসন্ত, কখনো কলেরা ইত্যাদি রোগ মহামারী আকার ধারন করে কেড়ে নিয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের জীবন। অনেক সভ্যতা ধ্বংসের কারণও এসব মহামারী। বর্তমান পৃথিবীও এরকম এক বৈশ্বয়িক মহামারীতে আক্রান্ত। করোনা নামক এই মহামারীর হাত হতে নিস্তার পেতে বর্তমান সভ্যতার মানুষ এখন পর্যন্ত পুরোপুরি ব্যর্থ। সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও প্রযুক্তি নির্ভর ইউরোপ, আমেরিকার ক্রমোদীর্ঘ মৃত্যুর মিছিল দেখে কাঁপছে বাংলাদেশ। আমাদের সীমিত সম্পদের ভিতর অপরিমিত মানুষকে করোনা মহামারীর হাত হতে রক্ষা করতে গিয়ে চিকিৎসক,স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসনিক  কর্মকর্তা সবার মুখে শুধু নাই, নাই রব। করোনা নির্ণয়ের কিট নাই, ডাক্তারের পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট নাই, সংক্রামক ব্যধির জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল নাই। এতোসব না থাকার আড়ালে আমাদের যা কিছু আছে শুধু তাই নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকার লড়াই করতে হবে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন আমাদের চিকিৎসক সমাজ ও মাঠ পর্যায়ের  প্রশাসন কর্মকর্তারা।
মানব সেবাকে দায়িত্ব স্বীকার করা চিকিৎসক সমাজের অসংখ্য মহতি প্রাণের করোনার চিকিৎসার নামে প্রকারন্তরে আত্মাহুতির সদিচ্ছার সাথে একজন প্রশাসক, একজন পারভেজুর রহমান (উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সাভার)-এর ভূমিকা মানুষের জন্যে জীবন বাজি রাখার প্রমাণ পাওয়া যায় তার স্ত্রীর ফেইসবুক স্ট্যাটাসে। ভদ্রমহিলা লিখেছেন,”সামান্য  মাস্ক, রেইনকোটে কি পি.পি.ই. এর কাজ হয়। ঘরে আমার একমাত্র বাচ্ছা মেয়ে জেনেটিক্যালি এ্যাজমার রোগী। অথচ তার বাবা চষে বেড়াচ্ছেন  গোটা উপজেলা। বাবার দরদ যেখানে দায়িত্ববোধের কাছে হেরে যায় সেখানে সবার প্রার্থনা একমাত্র সম্বল। ভয়ে আছি।”
জিয়াউল হাসান নামে সাভারের একজন স্থানীয় নাগরিক তার ফেইসবুকে লিখেছেন,” আমার আইডিতে প্রায় ৫০জনের উপর প্রশাসনিক কর্মকর্তা আছেন। সবার প্রতি সম্মান রেখে বলছি আমার চোখে পারভেজুর রহমান একজন সুপারম্যান দক্ষ প্রশাসক। সবার কোনো সীমাবদ্ধতা আছে কিনা জানি না তবু তারা যা করছে এমন প্রাকৃতিক সংকটে সত্যি তা প্রশংসনীয়। তার মধ্যে সুপারম্যানের মতোই উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে নিজেই ছদ্মবেশে তদারকি করছেন। আর করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতায় দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সাভারের প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তায়। একজন প্রশাসকের কাছে জনগনের নিরাপত্তায় আর কিবা চাইতে পারি। সাভারের প্রতিটি মানুষের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইলো।”
করোনা ভাইরাস জীবন্ত প্রাণী নয়। এটি প্রোটিনের অণু (ডিএনএ) যা লিপিডের (চর্বি) মোড়কে মোড়ানো।এটা আমাদের নাক-চোখ-মুখের মাধ্যমে শরীরে ঢুকে গেলে নিজের জেনেটিক কোড বদলে ফেলে শক্তিশালী ও আত্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।
ভাইরাস যেহেতু কেবলই একটি প্রোটিন অণু এবং জীবন্ত নয় তাই এটাকে মেরেও ফেলা যায় না। তবে সে নিজে থেকে ধ্বংস হতে পারে। এটা কতক্ষণে ধ্বংস বা ক্ষয় হবে তা নির্ভর করে এর থাকার স্থানটির তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও স্থানটি কী উপাদানে তৈরি, তার উপরে।এবং এটার সংক্রমন নির্ভর করে তার বাহকের উপরে, বাহক কতজন মানুষের সংস্পর্শে গেলেন, সেই মানুষগুলো কতজন মানুষের সংস্পর্শে গেলেন, এরকম করে করে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে যায়, এই ট্রান্সলেশন ঠেকাতে হলে জনকোলাহল এবং মানুষের অবাদ চলাফেরার উপরে গুরুত্বারোপ করতে হবে, জনসচেতনতা বাড়াতে হবে,প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে,এই কাজ চিকিৎসকদের পক্ষে সম্ভব নয়, তার দায়িত্ব পড়ে জনপ্রতিনিধি ও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপর, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্বাসহীনতার প্রেক্ষাপটে দল নির্ভর জনপ্রতিনিধিদের উপর মানুষের যেমন বিন্দু মাত্র আস্থা নেই তেমনি সাধারণ মানুষের উপর জনপ্রতিনিধিদের নৈতিক কোনো প্রভাব নেই, তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানুষকে গৃহমুখী করার দায়ভার একমাত্র প্রশাসন কর্মকর্তাদের, সে যে যেভাবে পারে,লাঠি দিয়ে হোক আর ভয় দেখিয়ে হোক কাউন্সিলিং করে হোক অথবা ভালোবাসা দিয়ে হোক।
করোনা ভাইরাস ভঙ্গুর কারণ সুরক্ষার জন্য তা কেবল একটি চর্বির স্তর দিয়ে মোড়ানো। এ কারণেই সাবান ও ডিটারজেন্ট ভাইরাসটি থেকে মুক্ত হবার সহজ উপায়। সাবান ও ডিটারজেন্ট মূলত যে কোনো স্থানের তেল বা চর্বি সরাতে পারে। তেল বা চর্বি সরানোর উদ্দেশ্যে আমাদের অন্তত টানা ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে হয় যাতে করে প্রচুর ফেনা তৈরি হতে পারে। এর ফলে ভাইরাসের উপরের চর্বির স্তর ভেঙে গিয়ে পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে যায়।
এই প্রমিত কথাগুলো সাধারণ মানুষকে বিশ্বাস করাতে হলে আপনাকেও সাধারণের কাতারে নেমে আসতে হবে, আপনার আর সাধারণ মানুষের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান থাকলে তারা কখনও আপনাকে বিশ্বাস করবে না, যে ব্যবধানটা দূর করতে পেরেছেন ইউ,এন,ও সাভার জনাব পারভেজুর রহমান, তিনি তার উপজেলায় যেখানে যে সম্প্রদায়ের কাছে গেছেন নিমিষেই তাদের সম্প্রদায়ের সাথে মিশে গিয়ে হয়ে গেছেন তাদের একজন, তার দিক নির্দেশনা মেনে মানুষের জীবনাচরণের পরিবর্তনের ফলে শিল্পাঞ্চল সাভার যেখানে দেশের সব জেলার লোকজন বসবাস করে, যেখানে বিদেশি বায়ার’রা আসেন গার্মেন্টসে, সেখানে কোনো করোনা রোগী নেই।
বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের কল্যাণে দেখা যাচ্ছে এমন কোনো দিন নেই, কখনো ক্রেতা সেজে বিক্রেতার কাছে গিয়ে অধিক মুনাফা লাভের শাস্তি দিয়ে হচ্ছেন খবরের শিরোনাম। কখনও বিদেশ ফেরত মানুষকে হোমকোয়ারেন্টাইন না মানায় ছুটে যাচ্ছেন তাদের দরবারে। কখনও ডাক্তারদের পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করতে গার্মেন্টস্ মালিকদের কাছে ধর্ণা দিতে, আবার ছুটে যাচ্ছেন সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে মাদ্রাসা খোলা রাখা মাদ্রাসা প্রধানের কাছে মাদ্রাসা বন্ধের প্রস্তাবনা নিয়ে।সাভারের খেঁটে খাওয়া মানুষ যারা হোম কোয়ারান্টাইনে কাজ করতে না পেরে অনাহারে-অর্ধাহারে আছেন তাদের জন্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করে তা নিজ হাতে মানুষের ঘরে ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন, তার লিস্টে থাকা মানুষের একজনও যাতে উপজেলা প্রশাসনের বরাদ্দকৃত খাদ্য হতে বাদ না পড়ে তা নিশ্চিত করতে প্রতিটা মানুষকে নিজ হাতে খাবার সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে শেষ মানুষ পর্যন্ত অপেক্ষা করে তার খাবার প্রাপ্তি নিশ্চিত করে তবেই  ঘরে ফিরছেন।
গ্রিক দেবতারা মানুষকে পছন্দ করতেন না। কারণ মানুষ বড় বেশি বুদ্ধিমান। তারা অধীনতা স্বীকার করতে চায় না। তারা শুরুতেই মানবজাতিকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন। কিন্তু মানবদরদী টাইটান প্রমিথিউস মানবজাতিকে বাঁচিয়েছেন নলখাগড়ায় আগুন লুকিয়ে। তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন আগুনের ব্যবহার। কিন্তু সাভারের ইউ. এন. ও. তো প্রমিথিউসনন। নিজের অধীনস্হ তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট(সহকারী কমিশনার ভূমি) থাকা সত্ত্বেও তিনি কেন চষে বেড়াচ্ছেন মানুষের দরবারে। তবে কি তিনি ফেইম সিকার। ফেইম সিকার হয়ে থাকলে ভয়ানক সংক্রামক রোগের সমূহ থাবা মাথায় নিয়ে শুধুই কি তিনি খ্যাতির জন্যে ছুটে যাচ্ছেন সম্ভাব্য করোনাবাহী বিদেশ ফেরৎ মানুষের কাছে তাও ঘরে তার তিন বছরের বাচ্চা  মেয়েকে রেখে যে কিনা বংশগতভাবে এ্যাজমার রোগী হওয়ায় ভয়ানক করোনার ঝুুঁকিতে আছে। নাকি করোনা মোকাবিলায় আমাদের কি আছে কি নাই সেই বিতর্কে না গিয়ে প্রমিথিউসের আদলে মানুষকে আগুনের ব্যবহার শেখানোর মতো কনে তিনি সাভারের মানুষকে শেখাতে চাচ্ছেন আমাদের যা আছে তা ব্যবহার করে কিভাবে করোনা মোকাবেলা করা যায়।
কিভাবে বেঁচে থাকতে হবে, এইসব অমীমাংসিত জিজ্ঞাসার ভিতর শ্রদ্ধা জনাব পারভেজুর রহমান (উপজেলা নির্বাহী অফিসার,সাভার)-এর প্রতি এবং শুভকামনা রইল তার একমাত্র কন্যা সন্তানের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *