12:27 AM, 13 November, 2025

“যায় দিন ভাল, আসে দিন খারাপ”

FB_IMG_1586883210915

So let’s get ready for the bad to bad time.

আমরা অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের বা অন্যদের নানা ভাবে স্বান্তনা দিয়ে থাকি এই বলে যে, “একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।” অথচ ভুলেই যাই উপরের কথাটি যে, “যায় দিন ভাল, আসে দিন খারাপ”। আমাদের আজকের দিনটি যতই খারাপ হোক না কেন, আগামী কোন এক দিনের থেকে বেশ ভাল।

কেননা, ওই কথাটুকু শুধুই স্বান্তনা যে, “একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।” এই ভেবে অপেক্ষা করতে করতে পুরো জীবনই শেষ হয়ে যায়, কিন্তু সেই একদিন কোনদিন আসে না যেদিন সত্যিই সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই হয়তো নিজেদের স্বান্তনা দিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করানোর থেকে ভাল নিজেকে পরের খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করা।

এটি শুধু একটি মানুষের জীবনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। বর্তমান পরিস্থিতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। খুব বেশিদিন হয়তো হয় নাই যখন আমরা খবরে শুনেছিলাম কোন দেশে করোনা নামক ভাইরাসের আগমনে মৃত্যু হবার কথা। সেদিনও আমরা নিশ্চিন্ত ছিলাম এই ভেবে যে, আমাদের দেশ তো এখনও সুরক্ষিত। কিন্তু আজকের দিনটি দেখলে কি মনে হয় না যে, সেই দিনই ভাল ছিল?

নিঃসন্দেহে একদিন করোনা চলে যাবে, আবিষ্কার হবে করোনা প্রতিষেধক ও টিকা বা চিকিৎসা। ধীরে ধীরে সবাই সুরক্ষিত হতে শুরু করবে। মরার বদলে বাঁচা শুরু হবে। মনে হবে সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে। তখন হয়তো ঘরে ঘরে করোনা নয়, করোনার পরের জরুরী কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। করোনার বদলে ক্ষুধায় মরে পচে থাকা লাশের খোঁজ মিলবে। কে জানে এই পরিস্থিতির অবসান তখন কিভাবে হবে।

অভাব, দারিদ্রতা, ক্ষুধা এসবের সাথে লড়তে লড়তে সৃষ্টি হয়ে যাবে এক নতুন প্রজন্ম যারা কিনা ডিপ্রেশন বা মানসিক সমস্যা নিয়ে সামনে আসবে। কারন এই লকডাউন কেড়ে নিচ্ছে বহু শিশুর মানসিক বিকাশ যা আজ মোবাইল বা টিভি এসবের মাঝে নির্ভরশীল করে বাবা-মায়েরা লকডাউনে একটু শান্তি খুঁজেন। খুব বেশি দূরে নেই এই বাবা মায়েদের শান্তি অশান্তিতে পরিণত হবার।

এভাবেই একটার পর একটা খারাপ সময় আসবে, শেষ হবে, আবার নতুন আরেকটা। কোনটার থেকে কোনটা কম হবে না। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, যখনই যে সমস্যা উদ্ভাবন হবে, পূর্বেরটি কিছুটা ভাল ই মনে হবে। বার বার এটাই প্রমানিত হবে যে, “যায় দিন ভাল, আসে দিন খারাপ।”

যেহেতু এমন হবেই আমরা নিশ্চিত তবে আমাদের করনীয় কি? সেই মুহূর্তে যেটা করনীয় সেটাই হয়তো আমাদের করে যাওয়া উচিৎ কোন প্রকার ভাবনা চিন্তা ছাড়া। যেমন, বর্তমান পরিস্থিতিতে করনীয় সচেতনতা, পরিচ্ছন্নতা, নিজের সাথে সাথে অন্যদের কেয়ার করা, অভাবীদের পাশে দাঁড়ানো, ভয় না পেয়ে বুক ফুলিয়ে এই বিপদের সাথে লড়াই করা। সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, নিজেদের ও শিশুদের মানসিক ভাবে সুস্থ থাকার যেকোনো প্রক্রিয়া ট্রাই করা যেমনটি আমি লিখে বা কোরআন পড়ে বা নামাজ পড়ে বা জিকির করে বা ঘরের কাজ করে বা নতুন কিছু রান্না করে ট্রাই করে যাচ্ছি।

আজও প্রতিদিন আমি ঘুমাতে যাবার আগে এটাই ভেবে ঘুমাতে বাধ্য হই যে, না যেন কাল আজকের থেকে কতটা খারাপ হবে। ঘুম ভেঙ্গেও এটাই মনে বাসা বাধে যে, না যেন আজ আরও কতটা খারাপ কিছু হবে। কারন জীবনের প্রতি পদ আমাকে এই শিক্ষাই দেয়, তোমার আজকের দিনটি ই ভাল ছিল। পরের দিন এর থেকেও বেশি খারাপ ডেকে আনবে।

কারন, এক সময় আমার প্রতিটি বর্তমানে মনে হতো, এর থেকে খারাপ আর কি হতে পারে ! সময় আমাকে বার বার শিক্ষা দিয়ে গেছে, দেখো, এর থেকেও খারাপ তোমার আরও অনেক কিছুই হতে পারে। তাই আমি আজ আর এমন ভাবি না যে, এর থেকে খারাপ আর কি হতে পারে। আমি এটা ভেবেই নিজেকে এগিয়ে নেই যে, আগামীতে আর বেশি কি কি খারাপ হতে পারে। মন থেকে মেনে নেয়ার চেষ্টা করি এবং মনটা হালকা করে নেই।

কেননা, নিজের শেষ পরিণতি যদি কখনও কেউ মেনে নিতে পারে দুঃসাহসিক ভাবে তবে তাকে আর কেউ দমিয়ে দিতে পারবে না। এমনই একটি কথা পড়েছিলাম ডেল কার্নেগীর বই এ। সেটাই আমি আজও নিজের জীবনে কাজে লাগাবার চেষ্টা করি। মেনে নিতে কষ্ট হয় বহু বিষয়। কিন্তু এর থেকে বেশি খারাপ কি কি হতে পারে মনে করে মেনে নেই যে, আগামীতে এমনই কিছু হয়তো হতে চলেছে। মানসিক ভাবে আমাকে এখনই প্রস্তুত থাকতে হবে।

লেখকঃ মারুনা রাহী রিমি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *