11:15 PM, 12 November, 2025

করোনা আক্রান্ত ৫ গাইবান্ধায় হোম কোয়ারেন্টাইনে ১৫৮ বাড়ি ফিরে গেছে ৫

IMG_0177

করোনা ভাইরাসে গাইবান্ধায় ৫ এপ্রিল রোববার নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে গত ২৪ ঘন্টায় ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর তাদের করোনা ভাইরাস সংক্রমনের কোন প্রমাণ না পাওয়ায় ৫ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে এখন পর্যন্ত আমেরিকা প্রবাসী দু’জনসহ তার সংস্পর্শে আসা আরও দু’জনসহ মোট ৫ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। এরমধ্যে ৩ জন গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেসন ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবং অপরজন সাদুল্যাপুরের হবিবুল্যাহপুর গ্রামের হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে।জেলা শহরের অদূরে আনসার টেনিং সেন্টারে একশ শয্যার আইসোলিসন সেন্টার প্রস্তুত করা হয়েছে।পুলিশ ও আইন শৃংখলাবাহিনীর পাশাপাশি সকল ধরণের জনসমাগম রোধে কাজ করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ।

সিভিল সার্জন ডাঃ এবিএম আবু হানিফ জানান, রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদেশ ফেরত ১৫৮ ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ঢাকা থেকে রক্ত পরীক্ষার ফলাফল না জানা পর্যন্ত সন্দেহজনক রোগীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে।

রোববার জেলা প্রশাসকের এক প্রেস রিলিজে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলার ৭টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভায় ১৭ হাজার ৫শ’ দরিদ্র শ্রমজীবি কৃষক পরিবারের মধ্যে ১শ’ ৭৫ মে. টন খাদ্য সামগ্রী ও ১৭ হাজার ৪শ’ পরিবারের মধ্যে ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়। এছাড়া বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ভান্ডারে ১শ’ ৮৬ মে. টন খাদ্য সামগ্রী ২ লাখ ২০ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে।

অপরদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ প্রতিরোধে গাইবান্ধা জেলা শহরের রাস্তাঘাটগুলোতে ও বিভিন্ন মোড়ে অহেতুক ঘোরাফেরা ও আড্ডা না দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে গাইবান্ধা সদর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে পথচারিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। রোববার সকাল ১০টা থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে এ তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশ। রিক্সা, মটর সাইকেলে দু’জন এবং অটোবাইকে এক সাথে গাদাগাদি করে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রেও বাধা দিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নামিয়ে দিয়ে পরিবহন চালকদের বাড়ি ফিরে যেতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যাতে এ জেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। এছাড়া অহেতুক ঘোরাফেরা করা এবং মোড়ে মোড়ে আড্ডা দেয়ার ক্ষেত্রেও পুলিশ বাধা প্রদান করে সকলকে বাড়ি ফিরে যেতে বলা হচ্ছে। তদুপরি সকাল ১১টার পর থেকে শহরের বাইরে থেকে রিক্সা, মটর সাইকেল ও বাই-সাইকেল নিয়ে শহরের মধ্যে প্রবেশ করার ক্ষেত্রেও বাধা দেয়া হয়। এমনকি রিক্সাসহ যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে রিক্সা চালকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

এব্যাপারে গাইবান্ধা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ খান মো. শাহরিয়ার জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনেসচেতনতা সৃষ্টি এবং শহরে অহেতুক ঘোরাফেরা না করে সরকার নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত ঘরে থাকতে পরামর্শ দেয়ার জন্য গাইবান্ধা সদর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে এ তৎপরতা চালানো হচ্ছে। তবে এব্যাপারে দরিদ্র রিক্সাচালকরা জানান, এতে তারা যাত্রী পরিবহন করতে না পেরে দুর্ভোগের কবলে পড়ছে। কেননা প্রতিদিন নির্ধারিত টাকায় ভাড়া নিয়ে তারা দিনভর রিক্সা চালিয়ে যে আয় করে তা দিয়ে রিক্সা ভাড়া পরিশোধ করা এবং তাদের পরিবার-পরিজনের জীবন জীবিকা হয়ে থাকে। এভাবে দিনের পর দিন রিক্সা চালাতে না পেরে তারা অর্থাভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুর্ভোগের কবলে পড়ছে। এক্ষেত্রে তারা ত্রাণ সহায়তারও প্রত্যাশা করেন।

এছাড়াও গাইবান্ধায় ত্রাণ তৎপরতা চালানো, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয়ের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থানের বিষয়টি মানা হচ্ছে না। তদুপরি গ্রামাঞ্চলের হাট- বাজারগুলোতে এখনও ঠাসাঠাসি ভীড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়লেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন নজর নেই। জেলার পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ১০ টাকা কেজি দরে দরিদ্রদের মধ্যে চাল বিক্রয় করা হচ্ছে। এই চাল ক্রয়ের জন্য তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করতে গিয়ে জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে ভীড় করে আইডি কার্ড প্রদান এবং ক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে ঠেলাঠেলি করে চাল ক্রয় করতে দেখা যায়। এছাড়া জেলা সদর, পৌর এলাকা ও গ্রামাঞ্চলগুলোতে জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যে ত্রাণ বিতরণ করছে সেক্ষেত্রেও নিরাপদ দূরত্বে এ বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না। অথচ রোববার পর্যন্ত গাইবান্ধা জেলায় ৫ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীসহ ১৫৮ জন সন্দেহজনক রোগীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন এ জেলায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থানের বিষয়টি মানা একান্ত জরুরী। অন্যথায় সংগত কারণেই করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের বৃদ্ধি পাওয়ার সংখ্যা ঝুঁকি ক্রমশ বাড়বে বই কমবে না। ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা সমূহ প্রতিপালিত না হলেও এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগ সংস্থা বা জনপ্রতিনিধিরা কোন ভূমিকাই রাখছেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *