12:29 AM, 13 November, 2025

৯ বছরে প্রেমের ফাঁদে ৪৮ নারীকে ধর্ষণ!

rapist-rana

এ যেন ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’ বের হওয়ার মতো ঘটনা। স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ভয়াবহ অপকর্মের তথ্য জানিয়েছে এক যুবক। জসিম উদ্দিন রানা নামের ওই যুবক স্বীকার করেছে, গত ৯ বছরে সে প্রেমের ফাঁদে ও অর্থের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে ৪৮ জন নারীকে।

এছাড়াও ছদ্মনামে মিথ্যা কাবিন বানিয়ে দুটি বিয়ে করেছেন রানা। তার প্রথম স্ত্রীর ঘরে রয়েছে দুই বছরের একটি কন্যা সন্তান। আর দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে জেলে তিনি। এ হত্যার ঘটনার স্বীকারোক্তিতেই অপকর্মের তথ্য দিয়েছেন রানা।

জসিম উদ্দিন রানার বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা করমজাতলা এলাকায়। ধর্ষণসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ায় পরিবার তার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে। যে কারণে অল্পবয়সেই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন রানা। এরপর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়াত। আর যেখানেই যেত সেখানেই কথার মায়াজালে ফেলে নারীদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলত। এরপর সুযোগ বুঝে করত ধর্ষণ। এভাবে একে একে তার বিকৃত লালসার শিকার হয়েছে ৪৮ নারী।

সেইসাথে নিজের আসল নাম-পরিচয় গোপন করে ছদ্মনামে মিথ্যা কাবিনে দুটি বিয়েও করেন রানা। তার প্রথম স্ত্রীর ঘরে রয়েছে দুই বছরের একটি কন্যা সন্তান। আর গত ৫ মার্চ, বৃহস্পতিবার রাতে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী সুরভী আক্তারকে (১৯) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার দক্ষিণবাজার এলাকার ভাড়া বাড়িতে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এর পরপরই পালিয়ে যান রানা।

পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৯ মার্চ, সোমবার রাতে বরগুনার নিজ বাড়ি থেকে রানাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। গতকাল ১০ মার্চ, মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালতে দ্বিতীয় স্ত্রী সুরভী আক্তারকে হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় রানা। এ সময়ই তিনি বিভিন্ন বয়সী ৪৮ নারীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রাণ কোম্পানির এসআর হিসেবে চাকরি করত রানা। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার দক্ষিণবাজার এলাকার মনির মাস্টারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রূপগঞ্জের ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার কাঞ্চন দক্ষিণ বাজার এলাকার মনির মাস্টারের বাড়ির ভাড়াটিয়া জসিম উদ্দিন রানা তার স্ত্রী সুরভী আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যা করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় সুরভীর বাবা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলে মামলার তদন্তে নামে পুলিশ। তারা সোমবার সন্ধ্যায় আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় বরগুনার পাথরঘাটা থানাধীন পদ্মা করমজাতলা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে রানাকে গ্রেপ্তার করে।

আদালতে দেয়া রানার স্বীকারোক্তি সূত্রে জানা যায়, মাত্র ১৫ বছর বয়সেই বখে যাওয়া রানা স্কুলজীবন থেকেই বিভিন্ন কিশোরীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করত। নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে পরিবার। রানাও বাধ্য হয় এলাকা ছাড়তে। এরপর সে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়াত। আর যেখানেই যেত সে এলাকার নারীদের কথার মায়াজালে ফেলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে ধর্ষণ করত।

প্রেমের ফাঁদে পড়ে ২০১৬ সালে রানার কাছে চলে আসে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নোনদা এলাকার মেয়ে নাজনীন বেগম। এসময় রানা নকল কাজির মাধ্যমে তাকে বিয়ে করে। তাদের সংসারে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।

গত বছর তাকে ফেলে রানা চলে আসে সাভার। সেখানে মোবাইল ফোনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মাদারীপুরের সদর উপজেলার চরমুগুরিয়া এলাকার সুরভী আক্তারকে। সুরভী রানার কাছে চলে এলে আবারো নকল কাজি দিয়ে বিয়ে করে সংসার শুরু করে সে।

কিন্তু বিয়ের ব্যাপারটি রানার কয়েকজন প্রেমিকা টের পেয়ে যাওয়ায় তারা সাভার ছাড়তে বাধ্য হয়। দুই মাস আগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এসে প্রাণ কোম্পানির এসআর পদে চাকরি নেয় রানা। সেখানে সে সুরভীকে নিয়ে কাঞ্চন বাজারের মনির মাস্টারের বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস শুরু করে।

স্বীকারোক্তিতে রানা জানায়, নকল বিয়ে ও তার বহু নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি টের পেয়ে আসল কাবিন করতে চাপ দেন সুরভী। অন্যথায় তার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলারও হুমকি দেন।

এতে ঘাবড়ে গিয়ে রানা সুরভীকে বৃহস্পতিবার রাতে কোকাকোলার সঙ্গে নেশাজাতীয় ট্যাবলেট খাইয়ে অচেতন করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেন। পরে লাশ ঘরে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে বরগুনায় পালিয়ে যান। এসময় সুরভীর বাবা দেলোয়ার হোসেনকে মোবাইলে তার মেয়ের মৃত্যুর খবর জানান।