2:03 AM, 13 November, 2025

চীন যা পেরেছে অন্য দেশ তা পারবে না

coronavirus_china

কয়েক মাস আগে যখন প্রথম চীনে আসি, তখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সবেমাত্র ছড়াতে শুরু করেছে। আর তার পর থেকে এক প্রকার গৃহবন্দী। স্কুল-কলেজ, অফিস, আদালত সব বন্ধ। পরিবার পিছু মাত্র এক জনকে কমপ্লেক্সের বাইরে বের হতে দেয়া হচ্ছে। সেজন্য প্রতি বাড়িতে একটা করে কার্ড দেয়া হয়েছে।

এই কার্ড ছাড়া কোনো ব্যক্তি কমপ্লেক্সের বাইরে বের হতে পারছেন না। কার্ড দেখানোর পরই বাজারে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। কমপ্লেক্সের গেট দিয়ে প্রবেশ ও বের হবার সময় বার বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। রাস্তা ও গাড়িগুলোকে প্রতিদিন অ্যালকোহল দিয়ে ভালো ভাবে স্যানিটাইজ বা জীবাণুমুক্ত করছেন সরকারি কর্মীরা।

তবে করোনা নিয়ে এখানে আর আগের মতো আতঙ্ক নেই। ১ মার্চ থেকে আবার মার্কেট খুলছে। শোনা যাচ্ছে, ১৭ মার্চ থেকে স্কুলও খুলে যাবে। সরকারি হিসেবে, আজ পর্যন্ত চীনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮০, ৮১৪ জন। মৃতের সংখ্যা ৩০৭৩ জন।

আমরা চীনের সিয়াচেন প্রদেশে চেন্দু শহরে একটি কমপ্লেক্সে বাস করছি। আমার স্বামী এখানকার একটি প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করেন। সিয়াচেন প্রদেশে মোট ১৪৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শহরের সব কমপ্লেক্সের বাসিন্দাদের এক প্রকার গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। এক কমপ্লেক্সের বাসিন্দারা তাদের পাশের কমপ্লেক্সেও যেতে পারছেন না। রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে তিন জনের বেশি লোককে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। চীনা নাগরিক হোন অথবা বিদেশি, সবার জন্য এক নিয়ম। নিয়ম ভাঙলেই তাকে জোর করে কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার এক ভদ্রলোক কয়েক দিন আগে অন্য ব্যক্তির কার্ড নিয়ে আমাদের কমপ্লেক্সে প্রবেশ করেছিলেন। ধরা পড়ার পরেই তাকে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারান্টাইনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এই অবস্থায় আমি কবে আবার দেশে ফিরতে পারব, তা জানি না।

আমি দুর্গাপুরের একটি স্কুলের শিক্ষিকা। আপাতত আমি ছুটি নিয়ে রয়েছি। বাড়ির লোকেরা, বন্ধু-বান্ধবরা আমাদেরকে নিয়ে অনেকেই চিন্তা করছেন। যদিও আমাদের এখানে খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না। চীনের সরকার খুব ভাল কাজ করছে।

চীন সরকার যে ভাবে করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করছে, সেটা অন্য কোনো দেশের পক্ষে করাটা সত্যিই মুশকিল। কারণ, এখানে সব কিছুই সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণ মানুষ সরকারি নির্দেশ মেনে চলে। চীনারা এমনিতেই খুবই শৃঙ্খলাপরায়ণ। সেজন্যই তারা এত বড় বিপদের মোকাবিলা করতে পারলেন।