নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

রাবি প্রতিনিধি :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান ‘নিজের জামাই ও মেয়েকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য নিয়োগ নীতিমালারও পরিবর্তন করেছেন। যেকারণে উপাচার্যের মেয়ে বিভাগে ২২তম ও জামাই ৬৭তম হওয়ার পরও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। অথচ বিভাগের প্রকৃত মেধাবী, যারা ১ম-৭ম স্থান অধিকারী, তারা বঞ্চিত হয়েছে। এছাড়াও নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন।’
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রগতিশীল শিক্ষকদের একাংশের সমন্বয়ে গঠিত দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজের ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার অষ্টম দিনের মত মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে এসব কথা বলেন আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত এবং প্রশাসনের অপসারণের দাবিতে দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজ’ ৩ অক্টোবর থেকে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ৩০ সেপ্টেম্বর, আইন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগসংক্রান্ত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার দর-কষাকষির ফোনালাপ ফাঁস এবং ২৬ সেপ্টেম্বর উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের ‘জয় হিন্দ’ স্লোগানের পর প্রশাসনকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী ও দুর্নীতিবাজ’ আখ্যা দিয়ে আন্দোলনে নামে তারা।
বেলা ১১ টায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ আরো বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যে নিয়োগ নীতিমালা ছিল, সেটা বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ নীতিমালা। সেটিই অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা তৈরি করেছে। সেই নীতিমালাকে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসে মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য নীতিমালাকে নামিয়ে নিয়ে এনেছেন। যদি বাণিজ্য অনুষদের নিয়োগ নীতিমালা দেখেন সেখানে একটাতে ৩.৫০ এবং আরেকটাতে ৩.২৫ করা হয়েছে। অথচ আগে ছিলো দুইটাতেই ৩.৫০ পেতে হবে। সেই সাথে বিভাগে ১ম-৭ম স্থানের মধ্যে থাকতে হবে। কিন্তু ব্যক্তিস্বার্থকে সামনে নিয়ে এসে এ নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এটা কি দুর্নীতি না?’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এক্রামউল্লাহ বলেন, ‘৯ অক্টোবর দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে আমার বিরুদ্ধে বহিরাগত ছেলেদের নিয়ে আসার অভিযোগ তুলে আমার নামে তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছে। কোনো রকম প্রমাণ ছাড়াই আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অথচ সৌন্দর্যবর্ধনের নামে কৃষি প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ লাখ টাকা লুটপাট করেছেন। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা, জনগণের ট্যাক্সের টাকা। এভাবে এ টাকা অহেতুক কাজে খরচ করার অধিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাই।’
তদন্ত কমিটির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা ভালোভাবে তদন্ত করেন। যদি আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে আমার হাত পা ধরে ক্ষমা চাইতে হবে।’
ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক মুজিবুল হক আযাদ খান, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তরিকুল হাসান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এস এম হায়দার, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ড. মো. জিন্নাত আরা বেগম, গণিত বিভাগের অধ্যাপক আসাবুল হক, সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মিজানুর রহমান, প্রাণ রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
