গাইবান্ধা সওজ বিভাগের এক হাজার কোটি টাকার কাজ সিন্ডিকেটের হাতে!

গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি:
সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কারনেই দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিনত হয়েছে গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথ বিভাগ এমনটাই দাবি করেছেন গাইবান্ধার সর্বসাধারণ মানুষ। আসাদুজ্জামান গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি ২০১৬ সালে ১৩ অক্টোবর গাইবান্ধায় যোগদান করেন। ১৩ অক্টোবর ২০১৯ বর্তমান কর্মস্থল গাইবান্ধায় তিনি ৩ বছর পুর্ন করেছেন। তিনি যোগদান করার পড় থেকে বেশ কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আতাত করে সড়ক বিভাগে বৃহত্তর একটি সিন্ডিকেট তৈরী করেছেন। ফলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ দুর্নীতি অনিয়মের আখড়ায় পরিনত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। নম্র ভদ্র বিনয়ী এই প্রকৌশলীকে দেখে মনে হয় না তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে দুর্নীতি অনিয়মের সাথে জরিত। সর্বদা সব সময় ম্যানেজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই চলেন এই কর্মকর্তা। স্থানীয় রাজনীতির দলের নেতাদের সাথে যেমন তার রয়েছে সু সম্পর্ক। তেমনি সাংবাদিকদের সাথে রয়েছে তার সখ্যতা। তার সময়ের গাইবান্ধায় এক হাজার কোটি টাকার ও বেশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে।প্রতিটি কাজের গুনগত মান নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন ওঠেছে। এছাড়া গত তিন বছর ধরে জেলার সড়ক গুলোর সংস্কার কাজের নামে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে মর্মে একাধিকবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য প্রকল্প সমুহের মধ্যে শতকোটি টাকা ব্যায়ে গাইবান্ধা সাঘাটা ফুলছড়ি নতুন সড়ক নির্মিত হয়েছে।অপরিকল্পিত ও নিম্ন মানের নির্মান সামগ্রী ব্যাবহারের ফলে নির্মানের তিন মাসের মাথায় বন্যায় এই সড়কের বৃহত্তর অংশ ভেঙ্গে যায়।বেশ কয়েকটি ব্রীজ কালভার্ট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়।ফলে বেশ কিছু দিন সাঘাটা ফুলছড়ি সড়কের সাথে গাইবান্ধার সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা বন্ধ হয়েছিল।
নির্ভর যোগ্য সুত্রে জানাযায়, সিন্ডিকেটের কারনে এই রাস্তায় পর দরপত্র দুই বার টেন্ডার বাতিল করা হয়।তৃতীয় দফায় দরপত্রে কাজ দেয়া হয় সড়ক বিভাগ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আইসিসি প্যারাডাইস এবং এমএম বিল্ডার্স ও মতলুবুর রহমান এই তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে ইতোমধ্যে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে তারমধ্যে গাইবান্ধা-গোবিন্দগন্জ ভায়া নাকাইহাট সড়কে করতোয়া নদীর উপর ২৫৩.৫৬ মিটার দৈর্ঘ্যের বড়দহ সেতু,১০.৩০ কিঃমিটার দৈর্ঘ্যের সাদুল্যাপুর -মাদারগন্জ সড়ক প্রশস্তকরণ,গাইবান্ধা- সুন্দরগন্জ-পীরগাছা(কদমতলী)১৮ কিঃমিটার দৈর্ঘ্যের ডিবিএসটি কাজ,একই রাস্তার দাড়িয়াপুরে দাড়িয়াপুর সেতু নির্মাণ,ঢাকা-বগুড়া-রংপুর-বালাবান্ধা জাতীয় মহাসড়কের গাইবান্ধার অংশে ৫.১০ কিঃ মিটার ওভারলে কাজ,গোবিন্দগন্জ -ঘোড়াঘাট -বিরামপুর-দিনাজপুর আ লিক মহাসড়কে করতোয়া নদীর উপর ৪০.৩৬ মিটার দৈর্ঘ্যের খুলসী সেতু নির্মাণ,বোনারপাড়া -জুম্মারবাড়ী-সোনাতলা সড়কে বাঙ্গালী নদীর উপর ২৬০.৭৬মিটার দৈর্ঘ্যের মেলান্দহ সেতু,বোনারপাড়া -উলাসোনাতলা সড়কে বাঙ্গালী নদীর উপর ৭৪.৭২ মিটার দৈর্ঘ্যের উলাসোনাতলা সেতু,সাদুল্যাপুর -লক্ষিপুর সড়কে ঘাঘট নদীর উপর ৯৯.১০ মিটার দৈর্ঘ্যের ঘাঘট সেতু,পলাশবাড়ী-গাইবান্ধা আ লিক মহাসড়কে ৪০.৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের সাকোয়া সেতু,গাইবান্ধা-ফুলছড়ি-ভরতখালী-সাঘাটা সড়কে ৩৪.৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের সরকারবাড়ী সেতু,৮.৮৫ কিঃমিটার দৈর্ঘ্যের পলাশবাড়ী-ঘোড়াঘাট জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন,১০.২৯ কিঃমিটার দৈর্ঘ্যের গাইবান্ধা -সাদুল্যাপুর জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন,৭ কিঃমিটার দৈর্ঘের গাইবান্ধা-বালাসীঘাট সড়ক প্রশস্তকরণ, পৌনে ৬৫ কোটি টাকার বরাদ্দে ২৮.৭৫ কিঃমিটার দৈর্ঘের গাইবান্ধা-ফুলছড়ি-ভরতখালী-সাঘাটা সড়ক প্রশস্তকরণ১২.৬৫কোটি টাকার বরাদ্দে১০.১০কিঃমিটার দৈর্ঘের গাইবান্ধা-সাদুল্যাপুর সড়ক প্রশস্তকরণ,১৫৭.২৪ কোটি টাকার বরাদ্দে ২১ কিঃমিটার দৈর্ঘ্যের পলাশবাড়ী গাইবান্ধা আ লিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণ, গাইবান্ধা-গোবিন্দগঞ্জ ভায়া নাকাইহাট সড়কটির প্রশস্থকরণ ও উন্নয়ন কাজ শুরু হবে।২৯.৫০কিঃমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কটি নির্মাণে প্রায় ১শ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।এছাড়া জেলা মহাসড়কের যথাযথ মান ও প্রশস্থতায় উ্ন্নীতকরণের লক্ষ্যে একই সময়ের মধ্যে আরো ৪টি সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হবে।সড়কগুলো হচ্ছে-পলাশবাড়ী-ঘোড়াঘাট সড়ক,ধবনী-বেলকা সড়ক,দাড়িয়াপুর-কামারজানী সড়ক ও রাজাবিরাট-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক। প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন এই কর্মকর্তা।
এসব প্রকল্পে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জানান আমরা কেউ সুফি কিংবা সাধু না। কাজ করলে ছোট খাটো অনিয়ম থাকবে। সব কিছু ম্যানেজ করেই তাকে চলতে হয়।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী একিউএম একরাম উল্লা বলেন একই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান একাধিক কাজ যাতে না পায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে।তবে তাদের কাজের গুনগত মান যাচাইয়ের দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ বিভাগের। এক্ষেত্রে কোন কর্মকর্তা দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
