পাকুন্দিয়ায় বর্ণমালায় জেএসসি পরীক্ষার্থীদের দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত

মো. স্বপন হোসেন, নিজস্ব প্রতিনিধি, পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ):
বর্ণমালা একাডেমি ও প্রস্তুতি প্রাইভেট হোমের জেএসসি পরীক্ষার্থীদের দোয়া অনুষ্ঠান টুঠারজঙ্গল (মাওলানা নগর) বালিকা দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
শুরুতে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলামের কোরআন তেলাওয়াত, শিক্ষকমন্ডলী, অতিথিবৃন্দ, অভিভাবক-অভিভাবিকা ও শিক্ষার্থী এবং পরীক্ষার্থীদের আসন গ্রহণ এবং আশুতিয়া ছামাদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মাওলানা মো. আজিজুল হকের অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ঘোষণা করার মাধ্যমেই পরবর্তী কার্যক্রম আরাম্ভ হয়।
মো. স্বপন হোসেনের সঞ্চালনায় মাওলানা মো. ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অত্র প্রাইভেট হোমের শিক্ষকমন্ডলীর মধ্যে গণিত শিক্ষক মো. শাহজালাল, ইংরেজি শিক্ষক মো. আকরাম হোসেন রুবেল, বিজ্ঞান শিক্ষক তানভীর আহমেদ মাসুম এবং বাংলা শিক্ষক মো. স্বপন হোসেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।
এছাড়াও বক্তব্য প্রদান করেন আশুতিয়া নতুন বাজারের পল্লী চিকিৎসক মোহাম্মদ মুকসুদ আলী, ইসলামি ফাউন্ডেশন টুঠারজঙ্গল শাখার মৌলভী শিক্ষক মাওলানা মো. ফজলুর রহমান, আশুতিয়া ছামাদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মাওলানা মো. আজিজুল হক, মো. আতিকুল ইসলাম, মো. মাহতাব উদ্দিন প্রমুখ।
মো. স্বপন হোসেন পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া, সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ সহ নানাবিধ দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যকালে তিনি বলেন, বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম,
মঞ্চে উপস্থিত প্রধান অতিথি এবং আমার শ্রদ্ধেয় সকল শিক্ষক ও আমার সামনে উপবিষ্ট শিক্ষার্থীদেরকে আমার পক্ষ থেকে জানাচ্ছি আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা। বর্তমান যুগ তথ্য নির্ভর, এ যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হলে সঠিক তথ্য ও জ্ঞান আহরণে একনিষ্ঠ হয়ে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি পিতা–মাতা ও শিক্ষকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ শিক্ষার একটি শ্রেষ্ঠ বাহন। প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, তোমাদের জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত তা বলার আমি কেউ নই। আমরা সবাই আমাদের নিজেদের জীবনের লক্ষ্য কী তা জানি। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে শুধুমাত্র নিজের জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পাওয়াই যথেষ্ট নয়। আমাদের জেনারেশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এমন একটি পৃথিবী গড়ে তোলা যেখানে প্রতিটি মানুষেরই নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করার সামর্থ্য আছে। লক্ষ্য হলো এমন একটি অনুভূতি যার ফলে তুমি নিজেকে তোমার থেকেও অনেক বড় কিছুর অংশ মনে করবে। এর থেকে তুমি নিজের সামর্থ্যের চেয়েও বড় কিছু করার অনুপ্রেরণা পাবে। তোমার লক্ষ্যই তোমাকে প্রকৃত সুখের অনুভূতি দিবে। আমাদের বাবা-মায়েদের সময়ে একটি ভালো চাকরি করা, একটি ভালো সমাজের অংশ হওয়া সুন্দরভাবে জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বর্তমান যুগে প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে চাকরির পরিমাণ দিন দিন কমছে। মানুষ পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি একাকীত্বে ভুগছে। আমি একদিন একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের শিশুদের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম যে তাদের যদি সুন্দর একটি লক্ষ্য থাকত, অবসর সময়ে করার মত কিছু থাকত তাহলে হয়তো তাদের এই পরিনতি হতো না।
আমাদের জেনারেশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নতুন কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি মানুষের মনে নতুন করে লক্ষ্য তৈরি করা।
বড় কোন পরিবর্তন আনতে হলে তোমাকে ঝুঁকি নিতেই হবে। তাই আজ আমি এমন ৩ টি বিষয়ের কথা তোমাদেরকে বলব যা আমার মতে পৃথিবীতে পরিবর্তন আনতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
১. উদ্যোগ নিতে হবে: অটোমোবাইল প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে আমাদের কর্মক্ষেত্রের পরিমাণ দিন দিন কমছে যা আমাদের প্রজন্মের সামনে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে কাজ করার বাইরেও আমাদের করার মত অনেক কিছুই আছে। প্রতিটি প্রজন্মই এমন কিছু কাজ করে যা তাদেরকে স্মরণীয় করে রাখে। যেমন: আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম মানুষকে চাঁদে পাঠিয়েছে, বিশ্ব থেকে পোলিও নির্মূল করেছে। এখন আমাদের প্রজন্মের পালা কিছু একটা করে দেখানোর। তুমি হয়তো ভাবছো তুমি জানোনা কীভাবে পৃথিবীকে পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, শুরুতে কেউই জানে না কীভাবে পৃথিবীকে পরিবর্তন করতে হবে। আমরাই সেই প্রজন্ম হতে পারি যারা দারিদ্র্য ও রোগব্যাধি দূর করবে আইডিয়া কখনো পূর্ণাঙ্গভাবে কারো মস্তিষ্কে আসে না। ছোট একটি আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করলে তা আস্তে আস্তে বড় হবেই। সুতরাং, উদ্যোগ নেওয়াই আসল। তাই তোমার সেই বড় ও পূর্ণাঙ্গ আইডিয়ার জন্য অপেক্ষা না করে তোমাদের ছোট ছোট আইডিয়াগুলো নিয়েই কাজ শুরু করে দাও। উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি তোমাকে অনেক ভুল বোঝাবুঝির জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে, এমনকি লোকে তোমাকে পাগলও বলতে পারে। আমাদের সমাজে আমরা বড় উদ্যোগ নিতে ভয় পাই, কেননা এতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিন্তু ভুল করার ভয়ে আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। আমাদের প্রজন্মের জন্য এটাই সেরা সময় কিছু একটা করে দেখানোর। আমরা যদি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী বসবাসের অনুপযোগী হওয়ার আগেই একে থামাতে পারি তবে কেমন হবে? অথবা বিভিন্ন রোগের ওষুধ আবিষ্কার না করে আমরা ঐসব রোগের নিরাময় আবিষ্কার করতে পারি! এভাবে পৃথিবীতে কোন রোগই থাকবে না, তাই আমাদের ওষুধের প্রয়োজনই থাকবে না। পুরনো আবিষ্কারের উন্নয়ন সাধন করার পাশাপাশি চলো নতুন কিছু আবিষ্কার করি।
২. আইডিয়াগুলো বাস্তবে রূপ দিতে হবে: আমাদের জেনারেশন নতুন উদ্যোগ নিতে ভালোবাসে যা আমাদের সমাজের জন্য খুবই হিতকর। কিন্তু ভালো উদ্যোগ নেওয়া তখনই সম্ভব হবে যখন আমাদের আইডিয়াগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সহজ হবে। জে.কে. রাওলিং তার হ্যারি পটার সিরিজের জন্য ১২ বার অগ্রাহ্য হয়েছিলেন। এমনকি ১০০ টির বেশি গান তৈরির পর সংগীত শিল্পী বিয়ন্সে তার প্রথম গান প্রকাশ করতে পেরেছিলেন। সুতরাং, বড় সফলতা অর্জনের জন্য তোমার প্রথমে ব্যর্থ হওয়াকে মেনে নেয়ার যে কৌশল তা শিখতে হবে।
একজন মানুষের আইডিয়াগুলোকে বাস্তব রূপ দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলে জাতিগতভাবে আমরা সবাই হেরে যাব। আমরা সফল মানুষদের সমাদর করি, কিন্তু আমাদের আশেপাশের মানুষগুলো তাদের আইডিয়া কাজে লাগাতে পারছে কিনা তার খোঁজ আমরা রাখি না। এমন অনেককেই আমি চিনি যারা তাদের দারুণ সব আইডিয়াকে কাজে লাগাতে পারছে না এই ভয়ে যে তারা একবার ব্যর্থ হলে আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। শুধু দারুণ একটি আইডিয়া দিয়েই সফল হওয়া যায় না, সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন আইডিয়াগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ যা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সবার উচিত একে অন্যের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া, যেন তারা তাদের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপান্তর করতে পারে। কেননা যত বেশি সংখ্যক মানুষ তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবে, আমাদের পৃথিবী ততই এগিয়ে যাবে।
৩. একত্র হয়ে কাজ করতে হবে: আগেই যেমনটা বলেছি, আমাদের প্রজন্মের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সকলকে নিজের জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পেতে সহায়তা করা। সকলকে বলতে আমি পুরো পৃথিবীর সবাইকে বুঝিয়েছি। এখানে উপস্থিত অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছো, এমনকি সবারই অন্তত একজন বহিরাগত বন্ধু আছে। আমরা কোন দেশের নাগরিক বা কোন ধর্মের অনুসারী তা বর্তমানে আমাদের পরিচয় বহন করে না, বরং আমাদের প্রকৃত পরিচয় হলো আমরা একজন গ্লোবাল সিটিজেন।
প্রতিটি প্রজন্মই তাদের কমিউনিটির পরিসর বৃদ্ধি করে, আর বর্তমানে পুরো বিশ্বই আমাদের কমিউনিটির অন্তর্গত। মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ এখন নির্ভর করছে বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষের এক হয়ে কাজ করার মাঝে। আমরাই সেই প্রজন্ম হতে পারি যারা দরিদ্রতা ও রোগব্যাধি দূর করবে। এবং আমরা সেই সুযোগ তখনই পাবো যখন আমরা সকলে একত্রিত হয়ে কাজ করতে পারব। বিশ্বের কোন দেশই একা জলবায়ু পরিবর্তন বা অন্যান্য রোগব্যাধি দূর করতে পারবে না, উন্নয়ন আনতে হলে আমাদের একটি গ্লোবাল কমিউনিটি হিসেবে কাজ করা আবশ্যক। পুরো পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রয়োজন নেই, তার জন্য আমরা নিজেরাই যথেষ্ট। আমাদের সমাজ আমাদেরকে বড় কিছু করার সাহস যোগায় এবং সহযোগিতা করে, এক কথায় সমাজ আমাদেরকে লক্ষ্য প্রদান করে। দুঃখের ব্যাপার হলো মানুষ দিন দিন সমাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু আমি জানি সমাজের প্রতি হারিয়ে যাওয়া আগ্রহ আমরা আবার ফিরিয়ে আনতে পারব। বিশ্বের সকল পরিবর্তনই ছোট পরিসরেই শুরু হয়েছিল। তাই আমাদের প্রজন্মের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ পৃথিবীর সকল মানুষকে একটি কমিউনিটির অন্তর্ভুক্ত করা যেখানে সকলের জীবনে একটি লক্ষ্য আছে।”
আমরা তোমাদের সম্মান ও ভালোবাসায় সিক্ত, জানিনা কতটুকু ভালোবাসা ও সন্মান দিতে পেরেছি তোমাদের, যদি মনের অজান্তে কখনো কষ্ট দিয়ে থাকি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখ আমাদের, আর তোমাদের জন্য রইল শুভ কামনা।
পরিশেষে আমি এই প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।
উদ্বোধকের দোয়া শেষে অনুষ্ঠানে ৩৮ জন পরীক্ষার্থীদের মাঝে ৯ম, ৭ম, ৬ষ্ঠ ও ৫ম শ্রেণী এবং একাডেমিক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে পরীক্ষা সামগ্রী বিতরণ এবং মডেল টেস্টে ১ম, ২য় ও ৩য় এবং মোবাইল কলে ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম স্থান অধিকারকারীদের হাতে বিশেষ পুরস্কার তুলে দেন অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষকমন্ডলী এবং অতিথিবৃন্দ।
সভাপতির সমাপনী বক্তব্য এবং অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা শেষে পরীক্ষার্থীদের পক্ষ হতে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়।
