কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে ঢুকে ছাত্রলীগ নেতাদের নিপীড়ন!

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা প্রায় প্রতি রাতে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের হোস্টেলে ছাত্রীরা। কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফাহিম ফয়সাল রাব্বি দলবল সহকারে ঢুকে যাচ্ছেন যে কোন ছাত্রীর কক্ষে। এমনকি রান্না করে খাওয়াতেও বাধ্য করছেন এসব ছাত্রলীগ নেতারা।
২১ অক্টোবর, সোমবার সকালে হোস্টেলে বসবাসরত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী কলেজ অধ্যক্ষ দেবব্রত ঘোষের কাছে অভিযোগ জানালেও তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হোস্টেলের ছাত্রীরা।
ছাত্রীরা অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের সভাপতি ফাহিম ফয়সাল রাব্বিসহ ছাত্রলীগ পরিচয়ে বেশ কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরে নির্বিঘ্নে হোস্টেলে যাওয়া আসা করছেন। তাদের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন অনেক ছাত্রী। অথচ বিষয়টি জানার পরও কলেজ প্রশাসন এ বিষয়ে একেবারেই নিশ্চুপ রয়েছে। সর্বশেষ ২০ অক্টোবর, রবিবার রাতের ঘটনায় হোস্টেলের প্রায় সবাই নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বলেও জানান তারা।
হোস্টেলে বসবাসরত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, ‘রাত সাড়ে ৯টায় রাতের খাবার শেষ করে অন্য মেয়েদের সঙ্গে নিচ থেকে রুমে ফেরার সময় দেখি হোস্টেলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে ছাত্রলীগ নেতা রাব্বি ভাই একটি মেয়েকে খুব খারাপ অবস্থায় জড়িয়ে ধরে রেখেছে। বেশ সুন্দর দেখতে ওই মেয়েটি নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও পারছে না। কাঁদছে কিন্তু চিৎকার করতে পারছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘একটু দূরে আরো তিন-চারজন ছেলে দাঁড়িয়ে। এ সময় আমি সঙ্গে থাকা অন্যদের সহযোগিতায় ওই মেয়েটিকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো আমাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। সিঁড়ির রেলিয়ে পড়ে গিয়ে একটি মেয়ের হাতও কেটে যায়। ওই মেয়েটির হাতের ওপর জামার একটি অংশ ছিঁড়ে যায় তখন।’
আহত মেয়েটি জানান, ঘটনার পর পুরো বিষয়টি হোস্টেলের মেট্রন (তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত) নাসরিন আপাকে জানানো হলেও তিনি আমাদের চুপ থাকার জন্য নির্দেশ দেন। কিছুক্ষণ পরই হোস্টেলে পুলিশ আসে। কিন্তু নাসরিন ম্যাডামের ভয়ে কেউ তাদের কাছে কিছু জানায়নি।
হোস্টেল মেট্রন নাসরিন হলে ছাত্রীদের লাঞ্ছনার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘রবিবার রাত ৮টার দিকে কলেজ ছাত্রলীগের পরিচয়ে বেশ কয়েকজন পোলাওয়ের চাল আর মুরগি নিয়ে হোস্টেলে আসে। তারা রাঁধুনি রাজিয়াকে ১৫ জনের খাবার রান্না করে দিতে বলেন। পরে রান্না শেষ হলে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ফাহিম ফয়সাল রাব্বি ১০ থেকে ১৫ জনকে সঙ্গে নিয়ে খাবার নিতে আসলেও কিছুক্ষণ পর তারা চলে যায়।’
এ বিষয়ে হোস্টেলের রাঁধুনি রাজিয়া বেগম বলেন, ‘সারা দিনে অনেক কাজ করতে হয়। তার পরও তারা রাঁন্না করে দিতে বললে তো কিছুই করার নেই। মুখ বুঝে কাজ করতে হয়।’
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আলি হোসেন মুক্তা মেয়েদের এই অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন। এদিকে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদি হাসান রুবেল বলেন, ‘সুনির্দিষ্টি অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘দায়িত্বে অবহেলার কারণে সোমবার দুপুরে হোস্টেলের মেট্রন নাসরিন আকতার, নৈশ প্রহরি আবদুস সালাম এবং রাঁধুনি রাজিয়াকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও বিষয়টির তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে যাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’
তবে বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ফাহিম ফয়সাল রাব্বির সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
