6:55 AM, 13 November, 2025

ভারত ফুটবলের নব্য অহংকারে বাংলাদেশের আঘাত, “ভারত যেন ড্র করেই স্বস্তি”

fg

ক্রিড়া প্রতিবেদক: মোঃ আলী আকবর রনী

ভারতের ফুটবলের নব্য অহংকারে যেন দুরন্ত আঘাত হেনেঁছে বাংলার ফুটবল যোদ্ধারা। গতকালকের খেলার পূর্বে ভারতের ফুটবল দর্শকদের যেন তুচ্ছ দল হিসেবে হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ ফুটবল দল। অনেকেই হাই তুলে বলে উঠে, সুনিল ছেত্রী হেট্টিক করবে কত সময়ে, কিন্তু দূর্ভাগ্য ভারতের সকল ফুটবল দর্শকদের যেন খেলাটি ড্র করেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলতে থাকে, হায় ভগবান বড় বাঁচা বেঁচে গেলাম, যা খেললো বাংলাদেশ, শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে।

দর্শক সমুদ্রের মাঝে বাংলার ফুটবলাররা যেন এক দৃঢ় দেয়ালে পরিণত হয়েছিল গতকাল সলটেক মাঠে। নিজেদের রক্ষনভাগ ঠিক রেখে কাউন্টার এ্যাটাক নির্ভর ফুটবল খেলে অল্পের জন্য জয় হাতছাড়া করতে হলো।

পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী যুব ভারতিয় ক্রিড়াঙ্গন বা সল্ট লেক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ ও ২০২৩ সালের এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচটি ১-১ ড্র হয়েছে। বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে টানা দুই হারের পর জিততে জিতেই ড্র করে প্রথম পয়েন্টের স্বাদ পেল ডের শিষ্যরা।

‘ভারত-ভারত’, ‘ছেত্রী-ছেত্রী’-স্বাগতিক সমর্থকদের গগণবিদারী হুংকার আর গর্জনের মধ্যে শুরু থেকে চেনা ছকে ছিল বাংলাদেশ। উদান্ত সিং, গোলমেশিন সুনীল ছেত্রীকে কড়া পাহারায় রেখেছিলেন বাংলাদেশের রক্ষণভাগের খেলোয়াররা। রক্ষণের ডান দিকে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে ছিলেন রায়হান হাসান। বাঁ দিক দারুণভাবে সামলেছেন রহমত মিয়া। আর মধ্যে থেকে বাংলাদেশের রক্ষণভাগের ইয়াসিন ছিল চিনের প্রাচির ন্যায়। গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানাকে তাই প্রথমার্ধে কঠিন কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়নি।

সপ্তম মিনিটে ডি-বক্সে ঢুকে রাহুল বাকের অবৈধ ট্যাকলে মোহাম্মদ ইব্রাহিম পড়ে গেলেও রেফারির ভূল সিদ্ধান্ততে সাড়া মেলেনি পেনাল্টির। চার মিনিট পর জামালের দূরপাল্লার শট, পরে তারই কর্নারে ইয়াসিনের শট থাকেনি লক্ষ্যে। প্রতিআক্রমণে ভারতকে চাপে রাখার কাজটুকু হচ্ছিল বেশ। ৩০তম মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগটি নষ্ট হয় বাংলাদেশের। আদিলের ভুলে বল পেয়ে ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা বিপলুর বাড়ানো ক্রসে জীবন পা ছোঁয়ানোর আগেই এক ডিফেন্ডার কর্নারের বিনিময়ে ফেরান।

৩৪তম মিনিটে রাহুলের থ্রোয়ে মানবীর সিংয়ের হেড দারুণ ক্ষিপ্রতায় ফিস্ট করে ফেরান গোলরক্ষক আশরাফুল রানা। একটু পর সোহেল রানার ছোট করে বাড়ানো বল ভালো জায়গায় পেলেও তালগোল পাকিয়ে সুযোগ নষ্ট করেন ভুটান ম্যাচে জোড়া গোল করা জীবন। ৪১তম মিনিটে আসে ভারতকে স্তব্ধ করে দেওয়া সেই গোল।

জামাল ভুইয়ার দারুণ ফ্রি কিক লাফিয়ে ওঠা গুরপ্রিত সিংকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে গেলো। দূরের পোস্টে থাকা সাদউদ্দিন নিখুঁত হেডে খুঁজে নিলেন জাল। তরুণ উইঙ্গার সাদউদ্দিনের হাত ধরে বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশ পায় প্রথম গোল। সল্ট লেকের গ্যালারিকে স্তব্ধ করে দিয়ে মেললেন ডানা।

এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন কাতারকে ড্রয়ে রুখে দিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা ভারতকে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে চাপ দিতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু ভাগ্যদেবতা আর বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় সুযোগ নষ্ট হতে থাকে বারবার। ৫০তম মিনিটে ডিফেন্ডারদের ছিটকে দিয়ে ইব্রাহিমের বাড়ানো বলে জীবনের বাঁ পায়ের শট গোলরক্ষকের পায়ে লেগে ফেরে। পাঁচ মিনিট পর ইব্রাহিমের শট লাগে ক্রসবার।

৭৬তম মিনিটে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড জীবনকে তুলে নিয়ে মাহবুবুর রহমান সুফিলকে নামান জেমি ডে। এরপর ইব্রাহিমের বদলি নামান রবিউল হাসানকে। অদল-বদলে গোল খরার তাল কাটেনি দলের। ম্যাচের লাগাম মুঠোয় রাখেন জামাল-সাদরা। ৮৭তম মিনিটে সুনীলের জোরালো শট হেডে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান ইয়াসিন। হতাশায় মুষড়ে পড়েন ভারতের সর্বোচ্চ গোলদাতা। কিন্তু ব্রেন্ডন ফেরনান্দেসের কর্নারে আদিলের বুলেট হেডে পরাস্ত হন রানা। হারতে থাকা ম্যাচে ধুকতে ধুকতে ভারত শিবিরে ফেরে স্বস্তি। শেষ পর্যন্ত হারতে থাকা ম্যাচ ড্রয়ের স্বস্তিটুকু নিয়ে মাঠ ছাড়ে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৮৩ ধাপ এগিয়ে থাকা ভারত।

বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে দ্বিতীয় ড্র করল ভারত। ওমানের কাছে হারের পর এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন কাতারের সঙ্গে ড্র করেছিল ইগর ইস্তিমাচের দল।

দুদলের এ নিয়ে ২৫ বারের মুখোমুখি লড়াইয়ে ১১টি ম্যাচ হলো ড্র। ভারতের জয় ১১টি, বাংলাদেশের তিনটি।

“সর্বশেষে একটি কথাই উচ্চরিত হচ্ছিল সারা সলটেক স্টেডিয়াম জুড়ে বাংলাদেশ যেন গলায় পাড়া দিয়ে রেখেছিল, শুধু মাত্র দম যাওয়ার আগ মূহুত্বে ছেড়ে দিল, হায়।”